টাকার জন্য কিডনি বিক্রির চাপ না মানায় বধূকে নির্মম নির্যাতন, নন্দকুমারে ধৃত স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ
বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বাপেরবাড়ি থেকে দাবিমতো টাকা আনতে না পারায় গৃহবধূকে কিডনি বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁর উপর অমানবিক অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ। এরপর বাপেরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ওই বধূ। এমনই গুরুতর অভিযোগে রবিবার নন্দকুমার থানার কুমোরআড়া গ্রাম থেকে ওই বধূর স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিন ধৃতদের পূর্ব মেদিনীপুর সিজেএম কোর্টে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ভালোবাসা করে বিয়ে করার পর স্বামীর এহেন আচরণে মর্মাহত ওই বধূও।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ মার্চ নন্দকুমার থানার কুমোরআড়ার বাসিন্দা কার্তিক চক্রবর্তী ভালোবাসা করে বিয়ে করেন মহিষাদল থানার বেতকুণ্ডুর দেবযানী সামন্তকে। দেবযানীদেবী অঙ্ক নিয়ে বিএসসি পাশ। ২০২০ সালে তমলুক শহরে একটি নার্সিংহোমে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তমলুক শহরেরই একটি প্যাথলজি চালায় কার্তিক। সেখানে মায়ের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে দেবযানীদেবীর সঙ্গে কার্তিকের পরিচয় হয়। তারপর তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়।
কিন্তু, বিয়ের পর দেবযানীদেবী শ্বশুরবাড়িতে পা রাখা মাত্রই যৌতুক দেওয়ার ফতোয়া শুনতে হয়। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বাবাকে হারান দেবযানীদেবী। তিন বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বাড়িতে ২৬ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়াতেন। সেই টাকায় তাঁদের সংসার চলত। বিয়ের পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।
বিয়ের এক বছরের মধ্যেই সন্তানসম্ভবা হন দেবযানীদেবী। সে নিয়েও শ্বশুববাড়িতে তাঁকে গঞ্জনা শুনতে হয়। দেবযানীদেবীর তিন বছরের একটি কন্যা রয়েছে। কার্তিক প্যাথলজি ব্যবসা বড় করার জন্য দেবযানীর নামে স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে দফায় দফায় ঋণ নিতে শুরু করে। সেই ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এদিকে ঋণের টাকা শোধ করতে না পারায় গত বছর গ্রুপের অন্য সদস্যরা দেবযানীদেবীর মাকে মারধর করে। এই অবস্থায় দেবযানীদেবীকে বাপেরবাড়ি থেকে আরও টাকা আনার চাপ দিতে থাকে কার্তিক ও তার বাড়ির লোকজন।
শ্বশুরবাড়ির দাবিমতো টাকা দিতে না পারায় দেবযানীদেবীর স্বামী তাঁকে কিডনি বিক্রির পরামর্শ দেয়। সেজন্য কখনও গ্রহীতার সঙ্গে গ্রুপ ম্যাচ, আবার কখনও শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কলকাতায় নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, কিডনি দিতে অনিচ্ছুক দেবযানীদেবী গোটা বিষয়টি তাঁর ঘনিষ্ঠদের জানানোয় তাঁরা তাঁকে কিডনি বিক্রি করতে নিষেধ করেন।
এরপরই শ্বশুরবাড়িতে ঝামেলা শুরু হয়। গত ২০ অক্টোবর দেবযানীদেবীকে বেধড়ক মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওইদিনই তিনি হলদিয়া মহিলা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। থানার অফিসাররা দু’পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তা ব্যর্থ হয়। শেষমেশ ১ নভেম্বর নন্দকুমার থানায় স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন দেবযানীদেবী। এরপর পুলিশ রবিবার দেবযানীদেবীর স্বামী কার্তিক, শ্বশুর দিলীপ চক্রবর্তী, শাশুড়ি ছবিরানি চক্রবর্তী ও এক ননদ পুষ্পা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করেছে।
দেবযানীদেবী বলেন, ওরা আমার জীবন নরক বানিয়ে দিয়েছে। আমার নামে গ্রুপ থেকে ঋণ নিয়েছে স্বামী। সেই টাকা শোধ না করায় আমার মাকে মার খেতে হয়েছে। তারপর কিডনি বিক্রিতে রাজি না নাওয়ায় অমানবিক অত্যাচার করেছে। পুলিশের হাতে ধৃত নির্যাতিতা বধূর স্বামী। নিজস্ব চিত্র