• ৩ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রেল আধিকারিকদের ঘিরে ক্ষোভ
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: সামশেরগঞ্জে ট্রেন দুর্ঘটনায় তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দারা। রেলের উদাসীনতার জেরেই তিন শিশুর প্রাণ গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ, সামশেরগঞ্জের নতুন শিবনগরে রেললাইন পারাপারের জন্য আন্ডারপাস রয়েছে। কিন্তু, বৃষ্টি হলেই সেখানে জল জমে যায়। আন্ডারপাসে জল জমে থাকায় বাধ্য হয়ে রেললাইনের উপর দিয়ে তাঁদের চলাচল করতে হচ্ছে। এদিন তিন শিশুও লাইন দিয়ে পারাপার করছিল। সেই সময় ঘরে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। এদিন দুর্ঘটনার পর রেলপুলিশ ও রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা তাঁদের ঘিরে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তাঁরা দ্রুত রেলের আন্ডারপাস থেকে জল নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছেন।

    মালদহ শাখার রেলের পিআরও রসরাজ মাঝি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আন্ডারপাসে অতিবৃষ্টির জল জমে রয়েছে। তবে, সাধারণত মানুষ আন্ডারপাস ব্যবহার করে না। সময় বাঁচাতে ও দ্রুত পৌঁছতে অবৈধভাবে রেললাইনের উপর দিয়ে চলাচল করে থাকে। এটা একদমই উচিত নয়।

    উল্লেখ্য, রবিবার দুপুরে রেললাইন পারাপারের সময় সামশেরগঞ্জের শিবনগরে ট্রেনের ধাক্কায় জিসান শেখ(৭), রিহাত শেখ(৬) ও আরিয়ান শেখের(৬) মৃত্যু হয়। প্রথম দু’জনের বাড়ি সূতির মধুপুরে। আরিয়ানের বাড়ি নতুন শিবনগর গ্রামে। তাদের অপর এক সঙ্গী মোবারক শেখ গুরুতর জখম হয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সূতি ও সামশেরগঞ্জের মধ্যে সংযোগকারী রেলের আন্ডারপাসে গত দু’দিন ধরে বৃষ্টির জল জমে রয়েছে। আন্ডারপাসে ছ’ফুট উচ্চতা পর্যন্ত জল জমে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আন্ডারপাস দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাঁরা আন্ডারপাস সংলগ্ন রেললাইনের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কারণেই তিন শিশুর অকালে প্রাণ চলে গেল। এদিন বিকেলে রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রা তাঁদের ঘিরে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। আন্ডারপাসে জল জমার পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়নি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। 

    মৃত আরিয়ান শেখের মা মেরিনা বিবি কান্নায় ভেঙে পড়েন। আত্মীয়রা মেরিনাকে সান্ত্বনা দেন। কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ছেলেকে রেললাইনের ওপারে ব্যবসায়ীর কাছে বিড়ি জমা করতে পাঠিয়েছিলাম। তারপরেই খবর পাই, ট্রেনে কাটা পড়ে ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আন্ডারপাসে জল জমে না থাকলে হয়তো ছেলেটা পার হয়ে চলে যেত। অপর বালক জিসান শেখের এক আত্মীয় বলেন, রেললাইনের পাশেই মাঠ রয়েছে। সেখানেই এলাকার ছেলেরা খেলাধুলো করে। আন্ডারপাসে জল থাকায় রেললাইন পারাপার করতে গিয়ে ছেলেটা চলে গেল। 

    স্থানীয় বাসিন্দা সামিরুল ইসলাম বলেন, আন্ডারপাসে ছ’ফুট জল জমে রয়েছে। বাধ্য হয়ে মানুষকে রেললাইনের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আন্ডারপাস দিয়ে যাতায়াত করা গেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা নাও ঘটতে পারত। রেলের আরও তৎপর হওয়া উচিত। 

     সূতিতে ঘটনাস্থলে রেলের আধিকারিকরা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)