• কালীগঞ্জের কৃষি সমবায় ঘিরে শোরগোল, ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সমবায় সমিতির নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে সাধারণ মানুষকেও ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এমনকী সমবায় সমিতির সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদেরও ঋণ দেওয়া হয়েছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে। সবটাই হয়েছে ঋণগ্রহীতাদের কোনও জমানত ছাড়াই। এমন ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ১০০ জন। এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে কালীগঞ্জ ব্লকের শিয়ালখালা কৃষি সমবায় সমিতিতে। তা নিয়ে কালীগঞ্জ ব্লকে শোরগোল পড়েছে।‌ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে সমবায় সমিতির ম্যানেজার সাহনওয়াজ শেখের ভূমিকা নিয়ে। তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া, বকেয়া অর্থ পুনরুদ্ধার সহ একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে সমবায় দপ্তরের পক্ষ থেকে। এই নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির বোর্ড ভেঙে দেওয়া হতে পারে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। 

    প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে এই সমবায়ের অনিয়ম নিয়ে দপ্তরে অভিযোগ জমা পড়ে। সেইমতো দপ্তরের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে দেখা গিয়েছে, সমবায়ের পক্ষ থেকে মোট ১০০ জনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকেই সমিতির নির্ধারিত এলাকার বাইরের বাসিন্দা। অনেকে এই সমবায়ের সদস্যও নন। এমনকী কোনও জামানত ছাড়াই তাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। 

    তদন্তে জানা গিয়েছে, ৯২জন ঋণগ্রহীতা এখনও পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ করেননি। বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ ৫২ হাজার ৬০ টাকা। অভিযোগ, সমবায়ের ম্যানেজার সাহনওয়াজ সাহেব ক্ষমতাবলে এই ঋণ প্রদান করেছেন। আরও জানা গিয়েছে, তিনি অনুমতি ছাড়াই পলাশী মীরাবাজার এলাকায় একটি শাখা অফিস খুলেছেন। এমনকী প্রশাসনিক ক্ষমতার বাইরে গিয়ে সেই শাখায় নিজের ভাই, ভাইপো ও ভগ্নিপতিকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করেছেন। 

    এই অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে সমবায় দপ্তরের পক্ষ থেকে শুনানি হয়। সেখানে সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ লিখিত জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক ছিল না বলে জানায় দপ্তর। শুনানিতে সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি ও পরিচালকরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ম্যানেজারের অনিয়মিত কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেন।

    এরপর সমবায় দপ্তরের তদন্তে একাধিক আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে দপ্তরের পক্ষ থেকে সমবায় সমিতির বোর্ডকে বেশ কিছু নির্দেশ জারি করা হয়। নির্দেশে বলা হয়, সকল বকেয়া ঋণগ্রহীতাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে বকেয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বেআইনি ঋণ প্রদানের জন্য ম্যানেজার সাহনওয়াজ শেখের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সমবায়ের দৈনন্দিন কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য অস্থায়ীভাবে যোগ্য কর্মী নিয়োগেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

    তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনো পর্যন্ত দপ্তরের এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্দেশ কার্যকর না হলে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির বোর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর।

    নদীয়া জেলার সমবায় দপ্তরের আধিকারিক সজল রায় বলেন, সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতিকে এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়েছে। যার জন্য সমবায় সমিতিকে শোকজ করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দপ্তরের দেওয়া নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা ওই নির্দেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করার সুযোগ দিচ্ছি। এরপরেও যদি তা না হয় তাহলে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সমবায় সমিতির বোর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য বিষয়টি পাঠানো হবে।

    সমবায়ের ম্যানেজার বলেন, ঋণ অনেকটাই আদায় হয়েছে।‌ একসময় অনেক বেশি ঋণ বকেয়া ছিল। যাদের বকেয়া রয়েছে তাদের নোটিশ করা হয়েছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)