নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: নথিতে স্পষ্ট করে রোগিণীর নাম, রক্তের গ্রুপ লেখা রয়েছে। তারপরেও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগিণীকে দেওয়া হল ভুল গ্রুপের রক্ত। হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মীর গাফিলতিতে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে। তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শনিবার রাতের এই ঘটনা জানাজানি হতেই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের বারবার এধরনের গাফিলতিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন রোগীর আত্মীয়রা। এমএসভিপি তাপস ঘোষ বলেন, ঘটনা শুনেছি। রোগিণীর পরিবার এখনও লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নমিতা মাঝি ও নমিতা বাগদি নামে দুই রোগিণী ভর্তি রয়েছেন। ভাতারের বলগোনা এলাকার বাসিন্দা নমিতা মাঝি রক্তাল্পতায় ভুগছিলেন। তাঁর ছেলে সঞ্জিত মাঝি বলেন, চিকিৎসক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনার জন্য বলেন। সেই মতো আমি তা আনি। কিন্তু, সেই রক্ত নমিতা বাগদিকে দেওয়া হয়। তিনি সাপের দংশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। রক্ত দেওয়ার কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের কর্মীদের হুঁশ ফেরে। তড়িঘড়ি রক্ত দেওয়া বন্ধ করা হয়। কিন্তু, ততক্ষণে ওই রোগিণী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তুনু কোনার ভাতারের বলগোনা এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, এতবড় ভুল নার্স বা হাসপাতালের কর্মীরা কীভাবে করেন। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভোল বদলে দিয়েছে। এক শ্রেণির কর্মী ও চিকিৎসকদের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বদনাম হচ্ছে। যার গাফিলতিতে এই ঘটনা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের এক শ্রেণির কর্মীদের ব্যবহার ভালো নয়। অনেক নার্স ও চিকিৎসকও খারাপ ব্যবহার করেন। কোনও কিছু ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করলেও তাঁরা খারাপ ব্যবহার করেন।
নমিতা মাঝির ছেলে বলেন, ওই দিন আমরাই বিষয়টি নার্সদের গোচরে আনি। মায়ের জন্য আনা রক্ত অন্যজনকে কেন দেওয়া হচ্ছে, তা আমার স্ত্রী জানতে চায়। তারপরই তাঁদের টনক নড়ে। তাঁরা তড়িঘড়ি রক্ত দেওয়া বন্ধ করার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে ওই রোগিণীর শরীরে কিছুটা রক্ত চলে গিয়েছিল। তিনি ছটফট করতে থাকেন। এরপরই তাঁকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সঠিক মুহূর্তে না জানালে হয়তো পুরো এক বোতল রক্ত ওই রোগিণীর শরীরে চলে যেত। এক চিকিৎসক বলেন, রক্ত দেওয়ার আগে গ্রুপ এবং রোগীর নাম দেখা হয়। এক্ষেত্রে কেন সেটা হল না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। কেউ কেউ দায়সারাভাবে কাজ করেন। তারজন্য এমন ঘটনা হয়। এতে অন্যান্য রোগীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। রোগীদের দাবি, হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকেও রক্ত পেতে ঝক্কি পোহাতে হয়। ডোনার আনার জন্য চাপ দেওয়া হয়। দালালদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে খুব সহজেই রক্ত পাওয়া যায়। নিজস্ব চিত্র