• সিলিকোসিসে শিল্পাঞ্চলের আরও ন’জন শ্রমিক আক্রান্ত বলে সন্দেহ
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: মারণব্যাধি সিলিকোসিস ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে শিল্পাঞ্চলে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, নতুন করে ন’জনের শরীরে সিলিকোসিস  বাঁসা বেধেছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে একজন গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উদ্বেগের বিষয় হল, এতদিন এই রোগ সালানপুর ব্লকে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন রানিগঞ্জ, জামুড়িয়াতেও ছড়িয়ে পড়ছে। ধুলিকনা থেকে হওয়া এই অসুখের জন্য দায়ী মূলত কারখানা ও ক্র্যাশারের দূষণ। কিন্তু, সেই দূষণের রাশ কবে টানা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন ঘুরছে শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক মহলে। 

    জানা গিয়েছে, যে ন’জনের শরীরে এই রোগ হয়েছে বলে সন্দেহ, তাঁরা  বারাবনি, রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুকের শ্রমিক। রয়েছে জামুড়িয়ার শ্রমিকও। রানিগঞ্জের শ্রমিকের শরীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে তাঁকে প্রথমে বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শর্ত হল, সিলিকোসিস নির্ণায়ক বোর্ডে রোগীকে হাজির করতেই হয়। বোর্ড বসবে আসানসোল জেলা হাসপাতালে। সেই কারণেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা সেই শ্রমিককে জরুরি ভিত্তিতে আসানসোল জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি সহ বাকি আটজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বৃহস্পতিবার করবে বোর্ডের সদস্যরা। তারপরই কতজন রোগী সিলিকোসিস আক্রান্ত, তা ঘোষণা করা হবে। সিলিকোসিস আক্রান্ত হলে শুধু রোগী নন, রোগীর পরিবারও সরকারি সুবিধা পায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু একরকম নিশ্চিত। এখনও পর্যন্ত জেলায় প্রশাসনিক হিসেব অনুযায়ী পাঁচজন রোগীর সিলিকোসিস ধরা পড়েছে। তাঁদের একজনের মৃত্যুও হয়েছে। যদিও স্থানীয় সূত্রে দাবি, সংখ্যাটা অনেক বেশি। এতদিন জেলায় সিলিকোসিস বোর্ড না থাকায় সিলিকোসিস আক্রান্ত রোগীরাও টিবি রোগী হিসাবেই চিকিৎসা পেতেন। জেলা মুখ্য‌স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, ‘ন’জন সন্দেহভাজন রোগী রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বোর্ড বসছে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির করছি। যাতে সম্ভাব্য রোগীদের প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা যায়।’

    স্বাস্থ্যদপ্তর রোগী চিহ্নিতকরণে জোর দিয়েছে। মারণ রোগের ধরাও পড়ছে। কিন্তু এই মারণ রোগী পিছনে মূল কারণ দূষণ, তা নিয়ন্ত্রণ আদৌ কী কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? সেই প্রশ্নই জোরালভাবে সামনে আসছে। সিলিকোসিস নিয়ে আন্দোলন করা সালানপুরের যুবক অমর মাহাত বলেন, ‘যে সব সংস্থায় আকস্মিক পরিদর্শনে সরকারি প্রতিনিধি আসছে, তার আগেই সেই সংস্থার মালিক খবর  জেনে যাচ্ছে। হয় সেদিন কাজ বন্ধ থাকছে। না হলে সেই দিনটির জন্য দূষণ বিধি মানা হচ্ছে। সরষের মধ্যে ভুত থাকলে যায় হয়!’ সালানপুর, বারাবনি থেকে জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অবৈধ ক্র্যাশার। সিরামিক কারখানার নাম করে দেওয়াল দিয়ে সেখানে পাথর ভাঙার কাজ চলছে কোনওরকম দূষণ বিধি না মেনে। লোকের জমিতে অবৈধ খাদান গড়ে ওঠছে। প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিরোধীরাও এই 

    ইশ্যুতে নীরব। 
  • Link to this news (বর্তমান)