পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্কহীন বিষয়ে আন্দোলন নয়, চিঠির তোড়জোড়, বিশ্বভারতীতে থ্রেট কালচারের অভিযোগ
বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বোলপুর: পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক নেই, এমন বিষয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই পড়ুয়াদের। হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের এমনই চিঠি পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি সামনে আসতেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’ চালানোর অভিযোগ আনছেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০অক্টোবর বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে একটি ই-মেল ভাষাভবন এবং বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়। সেই ই-মেলে একটি চিঠির খসড়া রয়েছে। সেই চিঠি দুই ভবনের অধীনে থাকা বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কাছে পৌঁছেছে। বিভাগীয় প্রধানরাই সেই চিঠি পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছনোর তোড়জোড় শুরু করেছেন। কী কারণে এই চিঠি? সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিশ্বভারতীর ভাষা-বিদ্যা ভবনের সামনের রাস্তায় থাকা কিছু দোকানদারকে উচ্ছেদ করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেইসব দোকানদারদের পাশে দাঁড়িয়ে সরব হন পড়ুয়াদের একাংশ। সেইসঙ্গে, ২৯ অক্টোবর রেজিস্ট্রারের কাছে এনিয়ে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। ঠিক তার পরেরদিনই রেজিস্ট্রারের তরফে ওই মেল ভাষা ও বিদ্যা ভবনের অধ্যক্ষকে পাঠানো হয়। কী লেখা আছে ওই খসড়া চিঠিতে? সূত্রের খবর, অভিভাবকদের উদ্দেশে ওই চিঠিতে লেখা, ‘আপনার ছেলে/মেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে এমন কিছু কার্যকলাপে জড়িয়েছে যা নিয়ে তাদের ভাবার বিশেষ প্রয়োজন নেই। অনুরোধ, আপনি দয়া করে তাদের এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিন। পড়াশোনা এবং নিজের কেরিয়ারের দিকেই পড়ুয়াদের এই মুহূর্তে মনোনিবেশ করা উচিত। এরপরও যদি তারা এই ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে, বিশেষ করে যেগুলি শিক্ষার্থীদের জন্য কোনও উদ্বেগের বিষয় নয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।’ ইতিমধ্যেই সেইসব পড়ুয়াদের চিহ্নিতও করেছে কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেও একই কায়দায় পড়ুয়াদের বাড়িতে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তারপর থকে বহু পড়ুয়া, অধ্যাপককে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, ‘পড়ুয়াদের অভিভাবকদের চিঠি পাঠানো হলে প্রমাণ সহই পাঠানো হবে। পড়ুয়ারা যদি আউট অব লাইন হয়ে যায় তাহলে তা তাদের অভিভাবকদের জানানোতে তো কোনও অপরাধ নেই। কারণ, অভিভাবকরা অঙ্গীকারপত্রে সই করেই পড়ুয়াদের ভর্তি করেছেন।’
এনিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থ্রেট কালচার চালানোর অভিযোগ এনেছে এসএফআই। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী তথা লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক প্রত্যুষ মুখোপাধ্যায় বলেন, যেসব দোকানে পড়ুয়ারা বছরের পর বছর আড্ডা মেরেছে, খেয়েছে, তাদের উচ্ছেদের বিরোধিতা করে পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য অভিভাবকদের চিঠি পাঠিয়ে সাবধান করবে? ইতিমধ্যেই এক পড়ুয়াকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো হয়েছে। একে থ্রেট কালচার ছাড়া আর কী বলে? বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপক বলেন, ‘রেজিস্ট্রার খসড়া করে দেবেন, আর তা বিভাগীয় প্রধানরা অভিভাবকদের পাঠাবেন? হাতের পুতুল নাকি? আসলে এটা ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে লড়াই লাগানোর ফন্দি। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘রসিকতা হচ্ছে নাকি? পড়ুয়ারা আন্দোলন করবে না তো কারা করবে?’