• মঙ্গলকোটে দেবী যোগাদ্যার পুজো কমিটিতে আজও বহাল রাজতন্ত্রের পদ
    বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: ব্রিটিশ শাসনের পরেই ধীরে ধীরে বাংলাজুড়ে রাজতন্ত্র, জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। কিন্তু রাজা না থাকলেও রাজতন্ত্রের ধারা এখনও বহমান। মঙ্গলকোটের সতীপীঠ ক্ষীরগ্রামে মা যোগাদ্যা পুজো কমিটি এখনও রাজতন্ত্রের আদলেই পরিচালিত হয়। বছরভর রাজতন্ত্রের ধারাতেই এখানে পুজো পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে রাজা নেই, কিন্তু এখনও রয়েছে দারোগা, সভাপণ্ডিত, পাইক, নিশানধারীর মত রাজতন্ত্রের পদ। নিয়ম মেনেই এখানে বসে সভা। মা যোগাদ্যা পুজো কমিটির মধ্যেও রাজতন্ত্রেরই পদগুলি বর্তমান।  

    ক্ষীরগ্রামে সতীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল বলেই কথিত রয়েছে। যোগাদ্যা দেবীর প্রস্তর মূর্তি সারা বছর জলে রাখা থাকে। প্রত্যেক বছর বৈশাখের সংক্রান্তিতে মা যোগাদ্যাকে জল থেকে তুলে মূল মন্দিরে রেখে চলে পুজো-পাঠ। তারপর আবার ওইদিন রাতেই মাকে ফের জলে দিয়ে দেওয়া হয়, এটাই রীতি। সারাবছর যোগাদ্যা মাকে মন্দিরের পাশেই ক্ষীরদিঘিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও বছরের বিশেষ কয়েকটি দিন মা যোগাদ্যাকে জল থেকে তুলে পুকুরপাড়েই পুজো করা হয়। কিন্তু সেই পুজো ভক্তদের দেখতে দেওয়া হয় না। প্রথম এই পুজো বর্ধমান রাজ পরিবারের হাত ধরেই শুরু হয়। ১৩৬৯ বঙ্গাব্দে বর্ধমানের রাজ পরিবার থেকে দেবী যোগাদ্যার পুজোর ভার যায় গ্রামের ট্রাস্টের হাতে। এরপর রাজার সৃষ্টি করা পদ অনুযায়ী পুজো পরিচালনা হতে থাকে। দেবী যোগাদ্যার বার্ষিক পুজো সহ মা কালী, দুর্গার আরাধনা হয় এই সতীপীঠে। সেসব পুজো পরিচালনার ভার থাকে দারোগার হাতে। সভাপণ্ডিত পুজোর নির্ঘণ্ট অনুযায়ী পুরোহিতদের দিয়ে পুজো করান। 

    মালাকার সারাবছর মায়ের পুজোর মালাগাঁথা, ফুল সংগ্রহ করে এনে দেন। পাইক পদমর্যাদার ব্যক্তি সভার হুকুম তামিল করেন। নিশানধারীর কাজ হচ্ছে আগে যেমন রাজারা কোথাও গেলে নিশান বয়ে নিয়ে যাওয়া হত, এখানেও তেমন মা যোগাদ্যা জল থেকে উঠলে নিশান দেখিয়ে মূল মন্দিরে তাঁকে নিয়ে আসেন। এছাড়াও কর্মকার, শাঁখারি সহ বেশ কিছু পদ রয়েছে। 

    পুজো কমিটির সম্পাদক পদ ছাড়া সবই বংশানুক্রমে হয়ে আসছে এখানে। পুজো কমিটির সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তীর কথায়, বর্ধমানের রাজা স্বয়ং কমিটির হাতে এই পুজো অর্পণ করেছিলেন। কিন্তু পুজো পরিচালনার জন্য কিছু পদ সৃষ্টি করেছিলেন। সেসবই রাজতন্ত্রের ধাঁচে চলে আসছে। আমরা এখনও সেই রাজতন্ত্রের ধারাই বজায় রাখি। 

    সেবাইত সঞ্জয় চক্রবর্তী, মানবেন্দ্র চক্রবর্তীরা  বলেন, বর্ধমানের রাজা রাজতন্ত্রের ধাঁচেই আমাদের পুজোর ভার দিয়েছিলেন। সেই রাজতন্ত্রের পদগুলি এখনও পুজো কমিটিতে রয়েছে। প্রতি মাসেই একবার সভা হয়। সেখানেই পুজোর কাজ পরিচালনা সংক্রান্ত আলোচনা হয়ে থাকে। 
  • Link to this news (বর্তমান)