ঘনঘন জরিমানার ঘোষণায় কান ঝালাপালা হচ্ছে মেট্রো যাত্রীদের!
বর্তমান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘোষণার পর ঘোষণা! যত দিন যাচ্ছে, মেট্রো পরিষেবা আচমকা ব্যাহত হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতির খুব একটা বদল না হলেও মিনিটে মিনিটে জরিমানার ‘জুজু’ দেখাতে খামতি নেই মেট্রোর। স্টেশনগুলির ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’-এ ক্ষণে ক্ষণে চলছে যাত্রীদের জরিমানার হুঁশিয়ারি সংক্রান্ত ঘোষণা। তারই মধ্যে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার খবরও ঘোষিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে কান ঝালাপালা যাত্রীদের।
গত ২৮ জুলাই থেকে কবি সুভাষ স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম-দক্ষিণেশ্বর মেট্রো রুট কার্যত চেনা ছন্দ হারিয়েছে। নিত্যদিন বিবিধ কারণে লাটে উঠছে পরিষেবা। এমনটাই অভিযোগ যাত্রীদের। তার উপর যুক্ত হয়েছে জরিমানা ‘জুজু’! শহরে এই মুহূর্তে চালু রয়েছে পাঁচটি মেট্রো রুট। সংশ্লিষ্ট করিডরগুলিতে লাগাতার চলছে জরিমানা সংক্রান্ত ঘোষণা। মেট্রোর দরজা বন্ধ হতে বাধা দিলে ৫০০ টাকা। স্টেশন কিংবা প্ল্যাটফর্ম চত্বর নোংরা করলে ২৫০ টাকা জরিমানা। প্ল্যাটফর্মের হলুদ রেখা অতিক্রম করলেও জরিমানা ২৫০ টাকা। যাত্রীদের দাবি, টিকিট কেটে মেট্রো ধরতে গিয়ে প্রায়ই খবর মিলছে মেট্রো বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাকাল হতে হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের ঘড়িতে সময় মিলিয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গা দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই বদলে যায় সময়সূচি। পরপর তিন- চারটি মেট্রো বাতিলও হচ্ছে কোনও কোনও দিন। প্রতিদিনের এসব ঝক্কির মধ্যে বারবার জরিমানার ঘোষণা আরও বিরক্তি বাড়িয়ে তুলছে যাত্রীদের।
যদিও রেলকর্তাদের দাবি, মেট্রো পরিচালনা মসৃণ করতেই এই ঘোষণা বারবার যাত্রীদের কানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে, ভিড়ের সময় বহু যাত্রী দরজা ইচ্ছকৃতভাবে ধরে রাখছেন। যার ফলে দরজা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মেট্রো ছাড়তে দেরি হচ্ছে। ফলে সময়ে পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া সার্বিকভাবেই ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা আরও বলছেন, মেট্রোর সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারেও জোর দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, নর্থ-সাউথ লাইনে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে মাঝেমধ্যেই। ফলস্বরূপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিষেবা লাটে উঠছে। এই ধরনের ঘটনায় রাশ টানতে প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে যাত্রীদের দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে যেতে হচ্ছে লাগাতার।
মেট্রো ভবনের এক কর্তার কথায়, ‘আমরা যাত্রীদের সচেতনতা বাড়াতেই এই ঘোষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাত্রীদের থেকে জরিমানা আদায় আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সামগ্রিকভাবে মেট্রো রেল ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য।’
ওই কর্তা আরও জানান, রেলের আইনেই এই ধরনের জরিমানা আদায়ের সংস্থান রয়েছে। অভিযুক্ত টাকা দিতে না পারলে শাস্তি হিসেবে জেলও হতে পারে। যদিও তাঁর দাবি, সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কলকাতা মেট্রোর সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে শাস্তি হিসেবে জেলযাত্রার বিষয়টি পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন একাধিক শীর্ষ আধিকারিক। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মেট্রো রেলে বিবিধ অপরাধে জেল খাটার মতো শাস্তি তুলে দেওয়া হবে। পরিবর্তে অপরাধ ভেদে জরিমানার হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হতে পারে।