২০০২ সালের ভোটার তালিকা না পেয়ে বাংলাদেশ যাত্রা আটকে দিল স্বরাষ্ট্র দপ্তর
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
মাসের পর মাস অপেক্ষা। নিয়ম মেনে আবেদন, তথ্যযাচাই, নথি জমা— সবকিছুর শেষে হাতে মিলেছিল পাসপোর্ট। তারও পরে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য দু’মাসের পর্যটক ভিসার অনুমতিও পেয়ে গিয়েছিলেন বহরমপুরের মেয়ে আফরিনা হাসনাত। আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে সীমান্তে পৌঁছনোর পর কখন বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবার পা রাখবেন, তা নিয়ে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তেই পেট্রাপোল চেকপোস্টে আচমকা থমকে গেল তাঁর যাত্রাপথ। অভিযোগ, ‘নাগরিকত্ব যাচাই’–এর নামে তাঁকে ফিরিয়ে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর। ঘটনার জেরে প্রচণ্ড ক্ষোভে ফুঁসছেন বহরমপুরের গোরাবাজারের এই বাসিন্দা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
আফরিনা জানান, ২৯ অক্টোবর কলকাতা থেকে ঢাকাগামী বাসে চেপে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। সীমান্তে পৌঁছতেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আধিকারিকরা তাঁকে বাস থেকে নেমে আসতে বলেন। জানানো হয়, তাঁর কাছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম সংক্রান্ত নথি, জমি–বাড়ির দলিল অথবা মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড থাকতে হবে। বিস্মিত আফরিনা বলেন, ‘আমি তো সমস্ত নথি জমা দিয়েই পাসপোর্ট পেয়েছি! তা হলে আবার পুরনো ভোটার তালিকার প্রয়োজন কী?’
তাঁর দাবি, ইমিগ্রেশন আধিকারিক প্রথমেই জানতে চান, এটি কি তাঁর প্রথম বিদেশযাত্রা। ‘হ্যাঁ’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় একের পর এক নথির দাবি। পাসপোর্ট, ভিসা থাকা সত্ত্বেও তা গ্রাহ্য হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি মোবাইলে বাবার প্যান কার্ড আর নিজের আধার কার্ডের ছবি দেখান। কিন্তু সেই নথিও গ্রহণ করেননি সংশ্লিষ্ট আধিকারিক।
উপায়ান্তর না দেখে সেখান থেকেই বাবাকে ফোন করেন আফরিনা। পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মীর হাসনাত জানান, ‘আমি নিজে ওই আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। যদি সন্দেহ থাকে, তা হলে পাসপোর্ট সত্যি কি না, তা যাচাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ সেটি না করে অকারণে মেয়েকে হয়রানি করা হল।’ তাঁদের অভিযোগ, পুরো ঘটনাই ঘটেছে একতরফা সিদ্ধান্তে।
পরিবারের দাবি, চরম মানসিক চাপের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিও কম হয়নি। বাসভাড়া, ভিসা, কলকাতায় থাকা–খাওয়ার খরচ মিলিয়ে দশ হাজার টাকার বেশি নষ্ট হয়েছে। আফরিনার কথায়, ‘যতটা খরচ হয়েছে তা তো আছেই, কিন্তু যে অপমানটা সহ্য করতে হল, তা দগদগে ক্ষত হয়ে রইল।’
ঘটনার পর মীর হাসনাত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ আমার ভারতীয় পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়নি। আজ আমার মেয়েকে এমন অপমানের মুখে পড়তে হল, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে এলাকায় আলোচনা শুরু হয়েছে— পাসপোর্ট পেতে এত নথি যাচাই হয়, অথচ যাত্রার সময় আবার পুরনো ভোটার তালিকার দাবি কতটা যৌক্তিক? স্থানীয়দের প্রশ্ন, ‘যদি পাসপোর্টই যথেষ্ট না হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? কীইবা দেখিয়ে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করবে?’
আফরিনার বাংলাদেশযাত্রা আপাতত আটকে। কিন্তু তাঁর অভিযোগ নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, সীমান্তে পরিচয় যাচাইয়ের নামে কি সাধারণ নাগরিকদের অকারণে হয়রানি করা হচ্ছে?