• বাঙালির প্রথম বিশ্বজয়! ফাইনালে দুর্দান্ত ‘ফিনিশ’ করে আপ্লুত ধোনিভক্ত রিচা
    প্রতিদিন | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: রিচা ঘোষ। প্রথম বাঙালি বিশ্বকাপ চাম্পিয়ন। ঝুলন গোস্বামী, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নপূরণ করলেন শিলিগুড়ির ২২ বছরের যুবতী। আজ ৪৪ তম ওভারে ব্যাট করতে এসে তিনি ২৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংসটা না খেললে, এই রানে পৌঁছতে পারত না টিম ইন্ডিয়া। এই ইনিংসের রহস্য কী? ম্যাচ শেষে স্মিত হেসে রিচা বললেন, “সবাই আমার উপর ভরসা রেখেছিল। সবাই বলছিল, আমি মারতে পারব। সেই ভরসাই আমার বিশ্বাস বাড়িয়েছে।”

    বছর ছয়েক আগের কথা হবে। শিবশঙ্কর পালের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। শিবশঙ্কর তখন বাংলা সিনিয়র মহিলা টিমের কোচ। বিস্ময়ভরা গলায় বললেন, “শিলিগুড়ি থেকে একটা মেয়ে এসেছে। ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছয় মারে। মহিলা ক্রিকেটে ওভাবে ছক্কা মারতে আমি খুব একটা দেখেনি।”

    কে জানত, বাংলার সেই মেয়েই একদিন নভি মুম্বইয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে একের পর ছক্কা হাঁকিয়ে যাবেন! মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রবল ভক্ত। আগে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। সঙ্গে উইকেটকিপিংও চলত। ধোনিকে দেখেই পেস বোলিং ছেড়ে পাকাপাকিভাবে উইকেটকিপিং শুরু। প্রথমে ওপেন করতেন। তৎকালীন বঙ্গ কোচ বুঝেছিলেন, টিমের জন‌্য মিডল অর্ডার একেবারে পারফেক্ট স্লট রিচার। কারণ পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, নেমেই ছক্কা হাকানোর সহজাত প্রতিভা রিচার মধ্যে ছোট থেকেই ছিল। রিচাকে আরও একটা ব‌্যাপার খুব টানত। সেটা মহেন্দ্র সিং ধোনির ম‌্যাচ শেষ করে আসার ক্ষমতা। শিবশঙ্কর রিচাকে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাব দেন, এককথায় রাজি হয়ে যান।

    রিচার মোবাইলে ধোনির একগুচ্ছ ভিডিও। সে’সব দেখে প্রেরণা খোঁজেন রিচা। বঙ্গ উইকেটকিপার ব‌্যাটারকে ইতিমধ্যে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের ‘ধোনি’ বলা শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক ধোনির মতোই অবলীলায় ছক্কা মারতে পারেন। এবারের বিশ্বকাপে ছয় মারার লিস্টেও এখনও পর্যন্ত সবার আগে। এসব অবশ‌্য রাতারাতি হয়নি। শুরুতে অবশ‌্য শুধু মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় মারার চেষ্টা করতেন। শিবশঙ্কর বোঝান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে হলে মাঠের সব অঞ্চল জুড়ে শট খেলতে হবে। তারপর থেকেই নিজেকে ঘষা-মাজার কাজ শুরু করেন রিচা। কলকাতায় থাকলেই পাটুলির অ‌্যাকাডেমিতে চলে যান। তারপর পুরো দিন জুড়ে প্র্যাকটিস চলতে থাকে। বল থ্রোয়িংয়ের বিশেষ মেশিং রয়েছে। রাতে প্র্যাকটিসের জন‌্য মাঠে আরও অতিরিক্ত আলো লাগানো হয়েছে। সেখানেই চলত রিচার প্রস্তুতি।

    নভি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়াম থেকে ওয়াংখেড়ের দূরত্ব প্রায় পয়ত্রিশ কিলোমিটার। চোদ্দো বছর আগে দোসরা এপ্রিল ওয়াংখেড়েতে পুরো দেশকে এক মায়াবী রাত উপহার দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সেই ধোনির বিশ্বজয়ের শহরই সাক্ষী হয়ে থাকল ধোনির শিষ‌্যার এক দর্পের ইনিংসের।
  • Link to this news (প্রতিদিন)