• বাংলার বাহারি চুল টাক ঢাকছে চিনারা, পাচারে নজর গোয়েন্দাদের
    প্রতিদিন | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: চিনে পাঠানোর জন্য এই রাজ্য থেকে গোপনে বাংলাদেশে চুল ‘পাচার’-এ সক্রিয় চক্র। ওই চক্রের সক্রিয়তা ধরা পড়েছে গোয়েন্দাদের রাডারে। এভাবে চুল পাচারের কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই এবার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে চুল পাচার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিআরআই, শুল্ক দপ্তর-সহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। একই সঙ্গে চুল পাচার ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের গোয়েন্দাদেরও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে বলেই খবর।

    সূত্রের খবর অনুযায়ী, মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ কয়েকটি জেলা থেকে সরবরাহ হয় বিভিন্ন ধরনের চুল। সেই চুল পরিষ্কার করে সরাসরিও চিনে রপ্তানি করত রাজ্যের কয়েকটি সংস্থা। কিন্তু বেশ কয়েকবার এমনও হয় যে, চুল সরাসরি রপ্তানির পর মান পছন্দ না হওয়ায় অথবা নিম্নমানের বলে দাবি তুলে বাতিল করে দেয় চিনের সংস্থা।

    বিষয়টি নিয়ে জলঘোলাও হয়। একাধিকবার কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের কাছে চিনের সংস্থাগুলির ভারতীয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও হয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতি হওয়ার পর থেকে রীতিমতো স্ট্র্যাটেজি পাল্টে ফেলেছে চিনের চুল তৈরির সংস্থা। চিনা সংস্থা বাংলাদেশে একাধিক চুল তৈরির কারখানা তৈরি করেছে। কিন্তু কাঁচামালের জন্য তারা নির্ভর করে রয়েছে এই রাজ্যের উপর। কারণ, চিনের বিশেষ পছন্দ এই রাজ্য, তথা পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের চুল। তাই বাংলাদেশে কারখানা হলেও চিনা সংস্থাগুলি তাদের এজেন্টদের নির্দেশ দেয়, এই রাজ্য থেকে চুল সংগ্রহ করতে। ভালো মানের চুল কিলোপ্রতি চার হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়।

    কিন্তু বাংলাদেশে চুল রপ্তানি করতে গেলে তার উপর কর বসানো হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, মূলত সেই কারণেই চিনা সংস্থাগুলি বাংলাদেশের এজেন্টদের উপর চাপ দেয় চোরাপথে বাংলাদেশে পাচার করতে। ফলে এই রাজ্য ও বাংলাদেশের সিন্ডিকেট চুল পাচার করছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। গোয়েন্দারা এবার ওই সিন্ডিকেট তথা চক্রগুলিকে শনাক্ত করতে শুরু করেছেন। সীমান্তবর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে গোয়েন্দাদের নজরদারি।

    জানা গিয়েছে, কলকাতা ও জেলাগুলির পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চুল সংগ্রহ করেন এজেন্টদের লোকেরা। ওজন করে কেনা হয় চুল। অনেকেই চিরুনির সঙ্গে উঠে আসা বা পড়ে যাওয়া চুল রেখে দেন। সেগুলিও বিক্রি হয়। আবার অনেকে নিজেদের চুল কাটিয়েও বিক্রি করেন। সেই চুল চোরাপথে পাচার হওয়ার পর বাংলাদেশের কারখানায় চিনা সংস্থাগুলি সেগুলি পরিষ্কার করে নিজেদের মতো তৈরি করে নেয়। এর পর বাংলাদেশ থেকে অতি সহজেই তারা চুল দিয়ে উইগ বানিয়ে পাঠিয়ে দেয় চিনে। একইভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি চক্র মায়ানমার হয়েও চিনে চুল পাচার করছে বলে অভিযোগ। সেই চক্রগুলিরও সন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)