‘কাননে ফুটিল জোড়াফুল’। তৃণমূলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘সেকেন্ড ইনিংস’ শুরু করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূল ভবনে ‘ঘরওয়াপসি’ হলো কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের। জল্পনা ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। বিশেষ করে তাঁকে পুজোর পরেই গত মাসে যখন নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (NKDA) চেয়ারম্যান করা হলো, তখনই বোঝা গিয়েছিল, খুব তাড়াতাড়ি নতুন কিছু হতে চলেছে। জল্পনা সত্যি হলো এ দিন। প্রথমে সরকারি পদ, তার পরে ঘরে ফেরা। সুব্রত বক্সী ও অরূপ বিশ্বাস তাঁদের দলে স্বাগত জানান।
শোভন বলেন, ‘আমার উপরে যে দায়িত্বই দেওয়া হবে, আমি তা পালন করব। কয়েক দিন আগেই NKDA-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমার কাজ আছে। আমি চেষ্টায় কোথাও ত্রুটি রাখব না। এই সুন্দর ঘরকে আগামিদিনে আমার সমগ্র শক্তি দিয়ে শক্তিশালী করে তুলব।’ এ দিন তৃণমূল ভবন থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কালীঘাটে সাক্ষাৎ করতে বেরিয়ে যান শোভন-বৈশাখী।
২০১৭ সালের পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে শুরু করে তাঁর। প্রথমে কলকাতার মেয়র পদ ছাড়েন। ছাড়েন মন্ত্রিত্ব। বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, বিধানসভার মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকেও সরে যান। তার পরে ছাড়েন দল।
২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে দিল্লিতে উড়ে যান শোভন চট্টোপাধ্যায়। মুকুল রায়ের উপস্থিতি যোগ দেন বিজেপিতে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন, বৈশাখীর সঙ্গে সম্পর্ক, দলের দীর্ঘদিনের সৈনিক তথা শোভন-জায়া রত্নার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি, দলের অনেকেই ভালো ভাবে নেননি। সেখান থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে শোভনের সম্পর্কের অবনতি হওয়া শুরু হয়।
মুকুল সে দিন বলেছিলেন, শোভনের যোগদান বাংলায় বিজেপিকে আরও শক্তিশালী করবে। যদিও সে শক্তির পরিচয় মেলেনি। উল্টে শোভন-বৈশাখী বিজেপির মধ্যে ক্রমেই কোণঠাসা হতে শুরু করেন। কোনও কর্মসূচিতেই তাঁদের দেখা যেত না। এমনকী অমিত শাহ কলকাতায় এলে আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি শোভন-বৈশাখী। CAA-এর সমর্থনে জেপি নাড্ডা কলকাতায় মিছিল করলেও, ছিলেন না কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। ২০২১-এর ভোটে তাঁকে টিকিটও দেয়নি বিজেপি। এর পরেই বিজেপির সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন হয় তাঁদের।
দীর্ঘ দিন রাজনীতি থেকে দূরেই ছিলেন শোভন। তবে তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছে যে নেই, এমনটাও জোর দিয়ে কোনও দিনই বলেননি তিনি। ২০২২ সালে সকলকে রীতিমতো চমকে গিয়ে ভাইফোঁটার সন্ধেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে হাজির হন শোভন-বৈশাখী। গত তিন বছরে তা মিস হয়নি বলেই খবর। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। বন্যাবিধ্বস্ত পাহাড়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে তাঁরা সাক্ষাৎ করেন। এর পরেই শুরু হয় দিন গোনা। সেই কাউন্ট ডাউনের টাইমার থামল অবশেষে। তৃণমূলেই কানন।