জাল পাসপোর্ট মামলায় ইডির জালে চাকদহের কাঠমিস্ত্রি এবং তার ভাই-সহ তিন
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
জাল পাসপোর্ট মামলায় ইডির স্ক্যানারে এবার কাঠমিস্ত্রি এবং রাজমিস্ত্রি। সোমবার সকালে নদিয়ার এক কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। নদিয়ার চাকদহের দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পড়ারি গ্রামে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে ওই গ্রামে যান তদন্তকারী অফিসাররা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাঠমিস্ত্রি, তাঁর ভাই এবং বাবাকে আটক করেছে ইডি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, চাকদহের পড়ারি গ্রামের বাসিন্দা ওই কাঠমিস্ত্রির নাম বিপ্লব সরকার। সোমবার সকালে বিপ্লব ও তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে হাজির হয় তদন্তকারী দল। পরে দুই ভাই-সহ আরও এক জনকে আটক করা হয়। ধৃতদের নাম বিপ্লব সরকার, বাবা বিনন্দ সরকার এবং ভাই বিপুল সরকার। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দু’জন কাঠের কাজ করেন। তদন্তকারীরা কাঠমিস্ত্রি বিপ্লব ও তাঁর ভাই বিপুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। খতিয়ে দেখা হয় পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন নথি। প্রায় ৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালান আধিকারিকরা। বিপ্লব ও তাঁর ভাই বিপুলের পাসপোর্ট জাল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিরাটি থেকে আজাদ মল্লিককে জাল পাসপোর্ট মামলায় গ্রেপ্তার করে ইডি। আজাদ মল্লিক ছদ্মনাম, আসল নাম আহমেদ হোসেন। আন্তর্জাতিক হাওয়ালা চক্রে টাকা লেনদেনে জড়িত ছিল এই আজাদ। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিল। পরে তার কাছ থেকে পাকিস্তানের নথিও উদ্ধার হয়। আদপে আজাদ মল্লিক পাকিস্তানের নাগরিক।
আজাদকে জেরা করে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার গেদে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। গত মাসে নদিয়ার শিবপুর থেকে ইন্দুভূষণ হালদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে ইডি। পাকিস্তানি নাগরিক আজাদের সঙ্গে ইন্দুভূষণের যোগাযোগ রয়েছে বলে খবর। ইন্দুভূষণের চাকদহে সাইবার ক্যাফে ছিল। সেখান থেকেই একের পর এক জাল পাসপোর্টে তৈরি হত বলে জানা গিয়েছে।
ইন্দুভূষণ আজাদের পাসপোর্ট রিনিউ করে দিয়েছিল। এই ইন্দুভূষণের সঙ্গে যোগ রয়েছে চাকদহের কাঠমিস্ত্রি বিপ্লব সরকারের। আর তা খতিয়ে দেখতেই কাঠমিস্ত্রি বিপ্লব, তাঁর রাজমিস্ত্রি ভাই এবং বাবাকে আটক করা হয়েছে। বিপ্লবের পাসপোর্ট এবং ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। মোবাইলের কললিস্টও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এর আগেও জাল পাসপোর্টের তদন্তে চাকদহে তিনবার হানা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং ভারতীয় নাগরিকত্বের নানা জাল নথি ইন্দুভূষণ তৈরি করে দিতে বলে ইডি সূত্রে খবর। গত সাত-আট বছরে অন্তত ৩০০টি ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করেছিল ইন্দুভূষণ। তাকে দিয়েই ভুয়ো নথি তৈরির চক্র চালাত আজাদ। ইডি সূত্রে খবর, ধৃতের মোবাইল ফোনের তথ্য যাচাই করে ইন্দুভূষণের দু’টি মোবাইল থেকে আজাদের সঙ্গে ৫৫৭ বার যোগাযোগ করার কথা জানা যায়। সেই ফোনের সূত্র ধরেই এ বার খোঁজ মিলেছে চাকদহের বিপ্লব সরকার ও তাঁর ভাই-সহ তিন জনের। অভিযুক্তদের সঙ্গে ইন্দু ও আজাদের যোগ রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। তাঁরাও ভুয়ো পরিচয়পত্র বানানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নদিয়ার পাশাপাশি এদিন পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের সামনে এক অনলাইন আবেদনকেন্দ্রে তল্লাশি চালায় ইডি। পাসপোর্ট দপ্তরে গিয়েও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলে ইডি সূত্রে খবর। এসআইআর আবহে পাসপোর্ট মামলায় ইডির তৎপরতা স্বাভাবিক ভাবেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।