মিড-ডে মিলের পাতে সুস্বাদু টাটকা মাছ দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে মৎস্য প্রকল্প পুরুলিয়ায়
প্রতিদিন | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মিড-ডে মিলের পাতে আরও বেশি করে পুষ্টি পাইয়ে দিতে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মাছ চাষের মতো সামাজিক উদ্যোগ নিয়েছে গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের আইসিএআর সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার পুষ্প, মানবাজার এক ব্লকে মাছ চাষের প্রকল্প হাতে নেয় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে শুধু পড়ুয়াদের পাতে পুষ্টিকর খাবার হিসাবে টাটকা মাছ তুলে দেওয়া নয়, এলাকার জনজাতির মহিলাদের এই কাজের মধ্য দিয়ে যাতে আয়ের পথ খুলে দেওয়াও অন্যতম লক্ষ্য। ছোটনাগপুর মালভূমির এই এলাকায় জনজাতিদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নানা কারণে পিছিয়ে। দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, বাল্যবিবাহ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যর অভাব-সহ নানা সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই মানবাজার এক ব্লকের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সামাজিক কাজ বেশ কয়েক বছর ধরেই হাতে নিয়েছে। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ চায় স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘নারী ও কন্যাদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা’-র বাস্তবায়ন। সেই কারণেই আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইসিএআর-সিআইএফআরআই), ব্যারাকপুর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই ওই মহিলাদের দিয়ে মাছ চাষে স্থানীয় বৃষ্টিনির্ভর জলাশয়ে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। মোট ১৬টি বাঁধে প্রায় ১৪০ একর জলাশয় জুড়ে ৪৮টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় আইসিএআর-সিআইএফআরআই ১,৬০০ কেজি মাছের পোনা ও ১৬ টন মাছের খাবার, নৌকা, জাল, নেট-সহ মাছ চাষের বিভিন্ন উপকরণ তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি উপকারভোগী মহিলাদের পুকুরে মাছ চাষ এবং মাছকে খাবার দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা-সহ জলের গুণমান রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। মহিলাদের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সচেতনতামূলক শিবিরও হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই এই কাজ ঘুরে দেখেছেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। তিনি বলেন, “এই কাজের মধ্য দিয়ে স্কুল পড়ুয়ারা যেমন যথাযথ পুষ্টির সুবিধা পাবে, তেমনই জনজাতির মহিলাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।” সিফরির অধিকর্তা ড. বসন্তকুমার দাস বলেন, “এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে দু’টি কাজ হচ্ছে। এটাই এই প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য বিষয়।” গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র বলেন, “পুষ্ণা ও মানবাজার এক ব্লকের যে সকল জলাশয়ে এই মাছ চাষ হচ্ছে সেখানকার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে এই প্রকল্পের লভ্যাংশ থেকে এই কাজে যুক্ত মহিলারা সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মাছ দেবে। যাতে পড়ুয়ারা মিড-ডে মিলের পাতে যথাযথ পুষ্টি পায়।”
গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় জানিয়েছে, উৎপাদিত মাছের ৫০ শতাংশ স্থানীয় বিদ্যালয়গুলির মিড-ডে মিল প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনেই গোবিন্দপুরে বিতরণ করা হয়েছে এফআরপি ট্যাঙ্ক, রঙিন মাছ চাষের উপকরণ। যার মধ্যে ছিল অ্যারেটর, ফিড ও মাছের খাবার ও দেশীয় রঙিন মাছ। এই উদ্যোগ মহিলাদের ঘরোয়া আয়ের নতুন পথ খুলে দেবে। সিফরির অধিকর্তা বলেন, “মহিলাদের মৎস্য চাষে যুক্ত করা শুধু তাঁদের আয় বৃদ্ধিই নয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫৩১টি অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল জনজাতি পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে। যা পুরুলিয়ায় টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ রূপান্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”