আলাদা সংসার পাততে ‘চাপ’, হরিদেবপুরে প্রেমিকাকে গুলিকাণ্ডে ৩ ঘণ্টাতেই পুলিশের জালে যুবক
প্রতিদিন | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব আইচ: হরিদেবপুরে (Haridevpur) সোমবার সকালে শুটআউটের (Shootout) ঘটনার দ্রুত কিনারা করে ফেলল পুলিশ। মাত্র ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই গ্রেপ্তার হামলাকারী যুবক। ধৃতের নাম বাবলু ঘোষ। পিটিএসের কাছে একটি গাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রেমিকাকে গুলি করে বাড়িতে তালা দিয়ে জিনিসপত্র-সহ ভাড়ার গাড়ি নিয়ে চম্পট দিচ্ছিল। কৌশলে গাড়ির নম্বর ট্র্যাক করে তাকে পাকড়াও করে হরিদেবপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর জয়দেব বৈরাগীর নেতৃত্বাধীন একটি দল। এত দ্রুত হামলাকারীকে গ্রেপ্তার কলকাতা পুলিশের বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সোমবার সকাল প্রায় সাড়ে ৬টা নাগাদ প্রাতঃভ্রমণ করতে বেরিয়েছিলেন মৌসুমী হালদার নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা। তাঁকে লক্ষ্য করে আচমকাই ছুটে আসে গুলি। বাইকে চড়ে ২ জন গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। পিঠে গুলি লাগে মৌসুমীর। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তেই আততায়ীর নাম জানান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাবলুর নাম উচ্চারণ করেন মৌসুমী। প্রতিবেশী বাবলু ঘোষের সঙ্গে মৌসুমীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা এলাকার সকলের জানা। ফলে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে প্রেমে জটিলতার কারণে এই হামলা।
শুটআউটের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তে নামে হরিদেবপুর থানার পুলিশ। স্থানীয়দের কাছ থেকে বাবলু ঘোষ সম্পর্কে তথ্য পান তদন্তকারীরা। জানা যায়, বাবলুর মুরগির ব্যবসা আছে। ৯ বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে মৌসুমী হালদারের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক। দু’জনে গোপনে বিয়ে সেরেছেন বলে শোনা যায়। বাবলুর এক মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মৌসুমী সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে বাধা দেয় বাবলু। উলটে মৌসুমীকে সংসার ছেড়ে তাঁর সঙ্গে আলাদা করে ঘর বাঁধার কথা বলে চাপ দিতে থাকে বলে অভিযোগ। তাতে রাজি হননি মৌসুমী। এরপরই বাবলু চরম পদক্ষেপ করে। কোনও এক খদ্দেরের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে সোমবার সকালে হামলা চালায় মৌসুমীর উপর।
প্রেমিকার উপর গুলি চালানোর পর বাবলু নিজের বাড়ি থেকে জিনিসপত্র নিয়ে একটি ভাড়ার গাড়ি করে পালায়। তা নজরে পড়েছিল প্রতিবেশীদের। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকেই জানান, কোন গাড়িতে বাবুল চলে গিয়েছে। এরপর সেই গাড়ির মালিকের খোঁজ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলে হরিদেবপুর থানার পুলিশ।
এরপর ওসি প্রসূন দে সরকার, অতিরিক্ত ওসি সুদীপ্ত দেবঘরিয়ার নেতৃত্বে গোটা অপারেশন ছকে ফেলে পুলিশ বাহিনী। খদ্দের সেজে গাড়ির মালিককে ফোন করে ভাড়ার গাড়ি চাওয়া হয়। তিনি জানান, গাড়ি আপাতত নেই, হাওড়ার পাঁচলায় গিয়েছে। সেই গাড়ির নম্বর জেনে পুলিশ ট্র্যাক করতে থাকে। সেইসঙ্গে আরেকদল পাঁচলার উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে যে গাড়ি নিয়ে চম্পট দিয়েছিল বাবলু, মাঝপথেই তাকে দেখা যায়। পিটিএসের কাছে নম্বর মিলিয়ে ওই গাড়ি দাঁড় করায় পুলিশ। দেখা যায়, ভিতরেই বসে বাবলু। জিনিসপত্র নিয়ে সে পাঁচলায় গা ঢাকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তার আগেই পুলিশের জালে ধরা পড়ল সে। গোটা অপারেশন হয়েছে মাত্র তিনঘণ্টার মধ্যে। বাবলুকে আজ আদালতে পেশ করা হতে পারে।