নাস্তিক সম্মেলন হচ্ছে কলকাতায়, ধর্মবিশ্বাসী সংশয়বাদীদেরও ডাক সংগঠকদের, যোগ দিতে পারেন যাদবপুরে ডুবে মৃত ছাত্রীর মা
আনন্দবাজার | ০৩ নভেম্বর ২০২৫
ইদানীং কলকাতা শহরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। রাজনীতির মোড়কে ধর্মকে উপস্থাপন বা ধর্মের মলাটে রাজনীতিকে তুলে ধরার ধারাও শুরু হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেই উল্টোমেরুর চিন্তাকে সংগঠিত করার প্রয়াসও শুরু হয়েছে। কলকাতায় বসতে চলেছে নাস্তিকদের সম্মেলনের আসর।
বুধবার উত্তর কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরি হলে নাস্তিক মঞ্চের ডাকে প্রথম কলকাতা জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে যে কর্মসূচিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলের জলে ডুবে মৃত ছাত্রীর মা মীনাক্ষী মণ্ডল। নাস্তিক মঞ্চের ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তৈরি হবে তাদের কলকাতা জেলা কমিটি। তার পরে শুরু হবে সদস্যপদ সংগ্রহ।
বছর তিনেক আগে নবদ্বীপে নাস্তিক মঞ্চের রাজ্য সম্মেলন হয়েছিল। নিরীশ্বরবাদীদের বড় মিছিল দেখেছিল নিমাইয়ের শহর। তার পরে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে একই ধরনের কর্মসূচি হয়েছে চলতি বছরের গোড়ায়। এ বার সেই আসর বসতে চলেছে কলকাতায়। তবে একেবারে ‘কঠোর’ নাস্তিকদের নিয়েই যে সম্মেলন, তা-ও নয়। সংগঠকদের তরফে বাসুদেব ঘটক বলেন, ‘‘শুধু নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদীরাই নন। আমরা ধর্মবিশ্বাসী অথচ সংশয়বাদীদেরও সম্মেলনে আসার আবেদন জানিয়েছি।’’ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাসুদেবের বক্তৃতা শুনে তাঁর সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করেছিলেন যাদবপুরের মৃত ছাত্রীর মা। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ঈশ্বর যদি থাকতেন, তা হলে আজ আমার এই পরিণতি হত না। আমার এখন মনে হয় ঈশ্বর নেই। আমরা আমাদের মতো করে তাঁকে সৃষ্টি করেছি।’’ সন্তানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয়ী মীনাক্ষী বলেছেন, ‘‘আমার শরীরটা ভাল নেই। যদি ঠিক থাকি, তা হলে নাস্তিক সম্মেলনে আমি সশরীরে হাজির হব।’’
এই সময়েই কেন এই সম্মেলন? শিক্ষক তথা সমাজকর্মী কনিষ্ক চৌধুরীর কথায়, ‘‘সাধারণ একটা ধারণা রয়েছে যে, ভারতের ইতিহাস ধর্মের ভিত্তিতে অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু তা ঠিক নয়। প্রাচীন সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস সে কথা বলে না। বরং অনেক বেশি করে তা ছিল বস্তুবাদী এবং যুক্তিবাদী। একই সঙ্গে বর্তমান সময়ে দেশ জুড়ে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে ঘৃণার বাতাবরণও সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ তাৎপর্যপূর্ণ।’’ বুধবার অনুষ্ঠিতব্য নাস্তিক সম্মেলনের সূচনায় বক্তৃতাও করবেন কনিষ্ক। সংগঠকদের মধ্যে অনেকের বক্তব্য, এই সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সরকারের অবস্থান নিয়েও তাঁরা সরব হচ্ছেন এবং হবেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মকে সমান ভাবে দেখা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার মূলগত অর্থ ধর্ম থেকে সরকার নিরপেক্ষ থাকবে। অর্থাৎ, সরকার কোনও ধর্মকে খাটো করবে না। একই সঙ্গে কোনও ধর্মকে আলাদা করে তোল্লাইও দেবে না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই ‘নিরপেক্ষতা’ থাকছে না বলেই দাবি তাঁদের। সেই কারণেই এই সম্মেলনের আয়োজন।