• লালুর ক্যারিশ্মা অমলিন! যাদবদের গড় রাঘোপুরে এবারও পাল্লা ভারী তেজস্বীর, মহুয়া কেন্দ্রে বাবার ছায়ার সঙ্গে লড়াই তেজপ্রতাপের
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, রাঘোপুর: রাঘোপুরে কি এবার বিপাকে তেজস্বী? ‘ইয়ে যাদব কা গড় হ্যায়! ইহা বাস লালুকা চলতা হ্যায়!’ প্রশ্ন শুনে রীতিমতো ক্ষেপে গিয়েছিলেন বছর বাষোট্টির মুন্না যাদব। সরাসরি বললেন, ‘বিহারের পরের মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী ছাড়া আর কে?’

    পাটনা থেকে সদ্য তৈরি ঝাঁ চকচকে ছয় লেনের ব্রিজ পেরিয়ে গঙ্গার অন্য পাড়ের বিহার মনে করাবে কলকাতা আর হাওড়ার দৃশ্য। বৈশালী জেলার রাঘোপুর। লালু প্রসাদ যাদব তথা আরজেডি-র শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯৫ সালে এই বিধানসভা আসনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন লালু। তারপর এখানকার বিধায়ক হিসেবেই পাটনার কুর্সি সামলেছেন রাবড়ি দেবী। কিন্তু ২০১০ সালে ছন্দপতন। সেবার ১৩ হাজার ভোটে বিজেপির সতীশ কুমারের কাছে হারেন লালু-পত্নী। তবে ২০১৫ ও ২০২০—পরপর দু’বার এখান থেকে জিতে মায়ের হারের বদলা নেন তেজস্বী। লালুকে আর  নিরাশ করেনি রাঘোপুরের জনতা। তেজস্বীকে জিতিয়ে তাঁরা ফের একবার প্রমাণ করেন রাঘোপুর আদতেই যাদব গড়।

    কিন্তু এবার? পাঁচ বছরে গঙ্গা থেকে অনেক জল বয়ে গিয়ে। এবারের ভোটে বিরোধী মহাগটবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী লালুর ছোট ছেলে তেজস্বী। 

     ‘ইয়ে উচ নিচ কা লড়াই হ্যায় বাবু। ইস বারভি হাম তেজস্বী কো জিতায়েঙ্গে।’ চটজলদি উত্তর লালন যাদবের।  হজপুরওয়া গ্রামে রাম জানকী মন্দিরের পাশে চায়ের দোকান লালনের। কিন্তু কেন জেতাবেন তেজস্বীকে? ‘কারণ তেজস্বী লালুর ছেলে। আর কী?’

    রাঘোপুরে জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ যাদব এবং মুসলিম। এটাই লালু পরিবারের মূল ভোট ব্যাংক। অন্যদিকে, ৯.৮ শতাংশ মানুষ উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণ, ভূমিহার, রাজপুত গোষ্ঠীর। বাকি রবিদাস, কুর্মি, মুসাহার, মাল্লা ও তেলি সম্প্রদায়ের। জাতিগত অঙ্কেই রাঘোপুরে ভোট হয়ে আসছে। কিন্তু এবার উন্নয়নের প্রশ্নে বিজেপি প্রার্থী সতীশ কুমার যাদবকেই ভোট দেবেন এখানকার জনতা। এমনটাই দাবি রামদাউলি গ্রামের বাসিন্দা গজেন্দ্রকুমার সিংয়ের। বললেন, ‘আপ ব্রিজ সে নেহি আয়ে। ডেভলপমেন্ট দিখাইনি দিয়া’। গজেন্দ্র রাজপুত। তাঁর অভিযোগ, লালুর নামে ভোটে জেতেন তেজস্বী। কিন্তু তারপর কোনওদিন তাঁকে এই এলাকায় কেউ দেখেনি।' তাই এবার বিজেপি প্রার্থীর পক্ষেই বাজি ধরেছেন গজেন্দ্র। 

    রাজনৈতিক মহলের মতে, এখানে তেজস্বীর জয় নিয়ে তেমন কোনও সংশয় নেই। তবে মার্জিন অনেকটাই কমবে। কারণ, গত শনিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ২০২০ সালে এলজেপি (রামবিলাস) প্রার্থী রাকেশ রোশন। সেবার ২৪,৯০৭ ভোটে পেয়েছিলেন তিনি। এবার সেই ভোটের কিছুটা অংশও বিজেপির দিকে ফেরাতে পারলে তেজস্বীর জয়ের ব্যবধান কমতে পারে। তবে রাঘোপুরে যে এবারও লালুর নামেই ভোট হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।

    রাঘোপুরে পাশের বিধানসভা কেন্দ্র মহুয়ায় চিত্রটা কিন্তু ভিন্ন। এখানে বাবার ছায়ার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে লালুর বড় ছেলে তেজপ্রতাপকে। আরজেডি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর জনশক্তি জনতা দল নামে নতুন দল গড়েছেন তেজ। প্রার্থী হয়েছেন মহুয়া আসনে। এখানে বর্তমান আরজেডি বিধায়ক মুকেশ কুমার রোশনের সঙ্গে লড়াই তেজের।  ২০১৫ সালে এখান থেকেই জিতেছিলেন তিনি। সেবার অবশ্য সঙ্গে ছিল লালু-ক্যারিশ্মা। স্থানীয় বাসিন্দা পুরণ সিং বললেন, ‘তেজ প্রতাপ সাদামাটা মনের ছেলে। যা বলে তাই করে। মানুষ ওকেই ভোট দেবে। হাজার হোক লালু পুত্র তো।’ যদিও সংশয় থাকছেই। এখানকার এক বাসিন্দা নগেন্দ্রর কথায়, ‘আব আগার লালু ফিরসে বুলা লেতা তো জিততে তেজপ্রতাপ।’ তাই মহুয়া আসনে লালুর বড় ছেলের লড়াইটা বোধহয় বাবার সঙ্গেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)