নিজস্ব প্রতিনিধি, পাটনা: ‘জঙ্গল-রাজ’। নয়ের দশকে এই শব্দবন্ধটা জুড়ে গিয়েছিল বিহারের নামের সঙ্গে। সেই আমলের ভয় দেখিয়ে এবারের নির্বাচনে বিহারবাসীর মন পেতে চাইছে বিজেপি। নির্বাচনী প্রচারে লালুর আমলের কথা তুলে ধরে তীব্র আক্রমণ শানাচ্ছেন মোদি-শাহরা। তার মধ্যেই চোনা পড়েছে নীতীশ কুমারের দলের বাহুবলী অনন্ত সিংয়ের গ্রেফতারির ঘটনায়। যা ঘিরে তোলপাড় এনডিএর অন্দরের রাজনীতি।
ভোটের মুখে মোকামার জেডিইউ প্রার্থী বাহুবলী ‘ছোটে সরকার’ তথা অনন্ত সিংয়ের গ্রেফতারিতে এনডিএর ইমেজ খারাপ হয়েছে বলে মত বিজেপি হাইকমান্ডের। বিশেষত ‘জঙ্গল-রাজ’ যখন ভোটের ইস্যু, ঠিক সেই সময় এই পর্বের প্রথম রাজনৈতিক খুনে অনন্তের গ্রেফতারিতে জোটসঙ্গী জেডিইউয়ের সঙ্গে বিজেপির কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। রাজ্য বিজেপির অন্দরের খবর, পাটনায় এসে বিষয়টি নিয়ে জেডিইউ রাজ্য নেতৃত্বের সামনে নাকি খেদ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। সেই খবর পৌঁছেছে নীতীশ পর্যন্ত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মোদির রোড শোতে উপস্থিত ছিলেন না নীতীশ কুমার। জেডিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোদির এহেন খেদ প্রকাশে চটেছেন নীতীশও। কারন, অনন্ত সিং চারবারের বিধায়ক। শুধু জেডিইউ নয়, পাটনা ও পাশ্ববর্তী জেলার ভূমিহার ভোট এনডিএ-র ঝুলিতে যাওয়ার পিছনে তাঁর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। অবশ্য অনন্ত সিংকে এবার টিকিট দেওয়া নিয়ে আপত্তি করেনি বিজেপি। কারণ, অনন্ত সিং উচ্চবর্ণের ভূমিহার। সেক্ষেত্রে অনন্তকে টিকিট দেওয়া নিয়ে আপত্তি তুললে বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটব্যাংকে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই কোনও ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, সিওয়ানের রঘুনাথপুর কেন্দ্রে লালু ঘনিষ্ঠ কুখ্যাত ডন শাহাবুদ্দিনের ছেলে ওসামাকে আরজেডি টিকিট দেওয়ার পর বিজেপির সামনে ‘জঙ্গল-রাজে’র তত্ত্ব প্রচারের কাজ আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল। মোদি থেকে অমিত শাহ বা যোগী আদিত্যনাথ—সকলেই ওসামাকে ‘জঙ্গল-রাজ’ ফেরানোর ‘মুখ’ হিসেবে তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু অনন্ত সিং ইস্যুতে কিছুটা ধাক্কা খেতে হল বিজেপিকে।
সম্প্রতি বাহুবলী অনন্তকে টিকিট দেওয়া ইস্যুতে অমিত শাহকে বলতে শোনা গিয়েছিল, এটা শরিক জেডিইউয়ের ব্যাপার। এখানে বিজেপি হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু হস্তক্ষেপ না করলেও ভোটপ্রচার পর্বে বিজেপির কার্যত ছুঁচো গেলার দশা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর সম্ভবত সেই কারণেই ‘জঙ্গল-রাজ’ ফেরানোর ঝাঁঝালো আক্রমণ থেকে কিছুটা সরে এসে রবিবার আরা-র সভামঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে আরজেডি-কংগ্রেসের মধ্যে শরিকি বিভাজনের লাইন টানতে দেখা গিয়েছে। আসলে অনন্ত কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতেই মোদি মহাগটবন্ধনের শরিকি বিবাদ ফের খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন বলেই মত রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশের। এদিকে, অনন্ত সিং ইস্যু নিয়ে প্রচারে নেমেছেন তেজস্বী-রাহুলরা। তেজস্বী বলেছেন, ক্ষমতায় আসলে এইসব অপরাধীদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। সব মহলে বাহুবলী অনন্তকে আলোচনা থাকলেও এনিয়ে শরিকি দূরত্বের কথা মানতে নারাজ বিজেপি-জেডিইউ। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাজেশ বর্মার বক্তব্য, কোনও দ্বন্দ্ব নেই। নীতীশজির নেতৃত্বে আমরা সরকার গড়ছি, এটাই শেষ কথা। অনন্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন আইনের কাজ করেছে। এটাই এনডিএ। জেডিইউ নেতা তথা মুখপাত্র নীরজ কুমারের দাবি, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় মোদিজির রোড শোতে যোগদান করতে পারেননি নীতীশজি।
আসলে বাহুবলী রাজনীতি অনেকটা শাঁখের করাতের মতো। সেই কারণেই কিছুটা অনন্ত ইস্যুতে কিছুটা ব্যাকফুটে টিম এনডিএ।