• নাম বাদ গেলে সেন্সাসে নাগরিক বলে গণ্য হবে?
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি:

    এনআরসি এবং ভোটার তালিকার এসআইআরে কারও নাম বাদ গেলে তিনি কি আর নাগরিক থাকবেন? সেন্সাসে কি তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হবে? নাকি অন্য কোনও পরিচয়ে অভিহিত করা হবে এমন ব্যক্তিদের? এখন থে঩কেই এই প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ, আগামী ১০ নভেম্বর থেকে দেশে প্রাক সেন্সাস পরীক্ষামূলক সমীক্ষা শুরু হবে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে জনগণনার এই প্রাক প্রস্তুতি পর্ব। এনআরসি এবং এসআইআর তালিকাকে সেন্সাস ডেটায় সংযুক্ত করা হবে কি না এই প্রশ্ন নিয়ে জনগণনা বিভাগের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনাও করা হবে।

    ফরেনার্স আইন অনুযায়ী ‘ডি’ (ডাউটফুল) ভোটার তকমা দিয়ে অসমে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন বহু বাসিন্দা। নিজেদের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার জন্য নানাবিধ নথিপত্র দেখিয়ে তাদের ট্রাইবিউনালে আবেদন করতে হয়েছে। ২০১৯ সালে এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল সাড়ে ১৯ লক্ষ নাম, যার সিংহভাগ হিন্দু। তারপর ছ’বছর কেটে গেলেও চুড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। অসমে আগামী বছর বিধানসভা ভোট। অথচ সেই রাজ্যে এসআইআর করা হচ্ছে না। কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা এখনও প্রকাশ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। তাই যতক্ষণ না এনআরসি চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হচ্ছে, ততদিন এসআইআর করা সম্ভব নয়। এই ঘোষণার পরই অসমের বিজেপি সরকার আবেদন করেছে কমিশনে—‘এনআরসির তালিকাকেই এসআইআরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হোক।’ কিন্তু কমিশন সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি এখনও। ফলে প্রশ্ন উঠছে, অসমে এনআরসিতে যাদের নাম বাদ পড়েছে এবং ফরেনার্স ট্রাইবিউনালে বিভিন্ন আবেদন নিবেদনের পর চূড়ান্ত তালিকাতেও যাদের নাম বাদ যাবে, তাদের নাগরিকত্বের স্টেটাস কী হবে?

    শীঘ্রই শুরু হবে সেন্সাস। ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রথম দফার কাজ অর্থাৎ গৃহগণনা আরম্ভ হবে। আবার তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে এসআইআর। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে বাংলা সহ ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এসআইআর করা খসড়া ভোটার তালিকা। সেখানে যাদের নাম থাকবে না, তাদের আবেদন ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর্ব চলবে পরবর্তী মাসদুয়েক ধরে। সেই পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর চুড়ান্ত এসআইআর তালিকা প্রকাশিত হবে। তারপর কী হবে? যাদের নাম বাদ গেল, তাঁরা কী ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন সেন্সাসে? নাহলে কী পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা? এই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এনআরসির সঙ্গে ভোটার তালিকার সম্পর্ক নেই। অথচ এনআরসি পর্বে ‘ডি’ ভোটার তকমা দেওয়া হয়েছে সন্দেহভাজনদের। গুজরাত হাইকোর্টের এমন নির্দেশ রয়েছে। যদিও একই ফরেনার্স আইনে এসআইআরে নাম বাদ গেলেও একই প্রক্রিয়া অনসৃত হবে কি না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত কমিশন নীরব। রহস্যের আরও কারণ রয়েছে। বিজেপি দাবি করছে, বাদ যাওয়া হিন্দুরা সিএএ অনুযায়ী আবেদন করতে পারবে। প্রশ্ন হল, সে কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে না কেন? 
  • Link to this news (বর্তমান)