নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বকেয়া মিটিয়ে বানারহাটের দেবপাড়া চা বাগান খোলার দাবিতে ডেপুটি শ্রম কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করলেন শ্রমিকরা। সোমবার জলপাইগুড়িতে ওই বৈঠকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন। দীর্ঘ বৈঠকে অবশ্য বাগান খোলার ব্যাপারে কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি। শ্রমদপ্তর সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহে বাগানের মালিকপক্ষকে বৈঠকে ডাকা হবে। ওই বৈঠকে হাজির থাকতে বলা হবে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কোনওরকম নোটিশ না দিয়েই কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যায়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেবপাড়া চা বাগান বন্ধ। এর জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাগানের ১১৭৪ জন শ্রমিক। সাব স্টাফদের সাতমাস ধরে বেতন বকেয়া। বাবু স্টাফরা ১৪ মাস মাইনে পাননি। শ্রমিকদের মজুরিও বকেয়া রয়েছে। মেলেনি পুজোর বোনাস। দীর্ঘদিন ধরে জমা পড়ছে না শ্রমিকদের পিএফের টাকা। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকরা গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছেন না। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে বাগানে। অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ। স্কুলবাস চলছে না। বাগান খোলার দাবিতে সম্প্রতি শ্রমিকরা দু’দিনের রিলে অনশন করেন। বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে অবিলম্বে বাগান না খুললে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
দেবপাড়া চা বাগানের মালিকপক্ষের প্রতিক্রিয়া না মিললেও জলপাইগুড়ির ডেপুটি শ্রম কমিশনার শুভাগত গুপ্ত বলেন, বাগানে সাসপেনশন ওয়ার্কের নোটিশ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এটা ঠিক যে, ওই বাগানে কাজকর্ম হচ্ছে না। ফ্যাক্টরি বন্ধ। মালিকপক্ষও বাগানে নেই। আমরা বাগানটি খোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর আগে মালিকপক্ষকে ডেকে তাদের বক্তব্য শোনা হয়েছে। এদিন শ্রমিকপক্ষকে তা জানানো হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলি মালিকপক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠকের দাবি জানিয়েছে। আগামী সপ্তাহে শ্রমদপ্তরের মধ্যস্থতায় বাগানের মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। আশাকরি ওই বৈঠকে জট কাটবে।
দেবপাড়া চা বাগান নিয়ে এদিন শ্রমদপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি সঞ্জয় কুজুর। তিনি বলেন, দেবপাড়া চা বাগানের শ্রমিকরা খুবই সঙ্কটে রয়েছেন। আমরা শ্রমদপ্তরের আধিকারিকদের বলেছি, শীঘ্রই বাগান খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে যে মালিক রয়েছেন, তিনি যদি বাগান চালাতে না পারেন, তাহলে অন্যের হাতে তুলে দিন।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত বিজেপির ভারতীয় চা শ্রমিক ইউনিয়নের বানারহাটের সভাপতি জয়রাজ বিশ্বকর্মা বলেন, একের পর এক বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু বাগান খুলছে না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেবপাড়া চা বাগানের শ্রমিকদের। সবমিলিয়ে ১১ কোটিরও বেশি বকেয়া। শীঘ্রই বাগান না খুললে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।