এবার বাংলার বাড়ি পাবেন ৮৫ হাজার, দ্বিতীয় দফায় উপভোক্তার খসড়া তালিকা প্রকাশ
বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: নদীয়া জেলায় প্রকাশিত হল বাংলার বাড়ি প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার খসড়া তালিকা। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই তালিকায় মোট ৮৫ হাজার ৬৩৩জন উপভোক্তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই জেলার প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েত, ব্লক অফিস, মহকুমা শাসকের দপ্তর এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালিকাটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষ তা দেখে যাচাই করতে পারে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত উপভোক্তারা তাঁদের অভিযোগ বা আপত্তি জমা করতে পারবেন। যদি দেখা যায়, কোনও অযোগ্য ব্যক্তি বা পরিবারের নাম উঠেছে, তবে প্রশাসন তা যাচাই করবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে অযোগ্যদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেবে। এরপর সংশোধিত তালিকা গ্রামসভায় প্রকাশ করা হবে। যাতে প্রকৃত উপভোক্তারা তাঁদের নাম আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, দ্বিতীয় দফায় কতজন উপভোক্তা বাংলার বাড়ির টাকা পাবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। রাজ্য থেকে বরাদ্দ টাকা এলেই, তা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সমীক্ষার শুরুতে নদীয়া জেলায় মোট ৮৬ হাজার ৬০০জন উপভোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে, সুপার চেকিং ও বিভিন্ন যাচাই পর্বের পর প্রায় ১০০০ নাম বাদ পড়েছে। ফলে, চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় স্থান পেয়েছে ৮৫ হাজার ৬৩৩জন।
এদিকে, প্রথম দফার অগ্রগতি নিয়েও জেলা প্রশাসন তথ্য দিয়েছে। প্রথম দফায় ৪৬ হাজার ৩৫৮জন উপভোক্তার মধ্যে ৪৪ হাজার ৮০৯জন ইতিমধ্যেই বাড়ির কাজ শেষ করেছেন। অর্থাৎ, নদীয়া জেলায় ৯৬.৪ শতাংশ বাড়ি নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এটি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম সেরা সাফল্যের নজির।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবরের মধ্যে নদীয়ায় দ্বিতীয় দফার সুপার চেকিংয়ের কাজ শেষ করা হয়। এরপর ১৭ অক্টোবরের মধ্যে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই সম্পন্ন হয়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, ৩-১০ নভেম্বরের মধ্যে খসড়া তালিকা প্রকাশ ও অভিযোগ গ্রহণের কাজ চলবে। পরে, ২৬ নভেম্বরের মধ্যে গ্রামসভা করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য জেলার সব ব্লক, মহকুমা এবং জেলাস্তরে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রশাসনের আশা, অভিযোগ ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে প্রকৃত উপভোক্তারা দ্রুত বাংলার বাড়ির সুবিধা পাবেন।
গত লোকসভা নির্বাচনের পরেই ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলার বাড়ির প্রথম দফার প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তারপর ২০২৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়। সেইমতো উপভোক্তারা যাতে দ্রুত বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করেন, সেব্যাপারে রাজ্যের তরফে জোর দেওয়া হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় দফার উপভোক্তাদের টাকা ছাড়ার পালা। তাও বিধানসভার নির্বাচনের ঠিক আগেই।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, একাধিক সমীক্ষার পরেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা পশ্চিমবঙ্গ পায়নি। তার পরিবর্তে রাজ্য সরকার টাকা দিয়ে উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। সেটাই বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এবার বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে দ্বিতীয় দফার টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।