• পানীয়, সেচের জল পেতে কাকে বলতে হবে জানা নেই, মেঘরামের বাণই ভরসা গজপাথরবাসীর
    বর্তমান | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
  • প্রদীপ্ত দত্ত , ঝাড়গ্ৰাম:

    অহল্যাভূমি বিনপুর-২ ব্লকের গজপাথর। শিমূলপাল গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পাহাড় শ্রেণির মাঝে ছোট্ট গ্ৰাম। মূলত আদিবাসীদের বাস। পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢালু জমিতে বৃষ্টির জল জমিয়ে বছরে একবার ধান চাষ হয়। বৃষ্টি না হলে সেই চাষটুকুওকরা যায়না। এলাকায় সাব মার্সিবল বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই চাতক পাখির মতো বৃষ্টির জলের অপেক্ষায় থাকেন বাসিন্দারা। বিনপুর-২ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে প্রশাসনের উদ্যোগে চাষবাস ও পানীয় জলের জন্য সাব মার্সিবল বসানো হচ্ছে। কিন্তু গজপাথর এখনও উপেক্ষিত। স্থানীয় গ্ৰামবাসীরা পাহাড়ী উপত্যকায় বৃষ্টির জল জমিয়ে চাষবাস করেন। বৃষ্টি না হলে চাষবাসওহয়না। গতবছর বৃষ্টি না হওয়ায় ধান ভালো ফলেনি। বনবিভাগ জঙ্গলের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করে দেওয়ায়স্থানীয় মানুষদের রোজগারের পথও বন্ধ। ভরসাশুধু রেশনের চাল। রুক্ষ পাথুরে জমিতে এবারও ভালো ফসল হবে কিনা জানা নেই।

    বেলপাহাড়ী বাজার থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিয়ে কাঁকড়াঝোর যাওয়ার রাস্তায় পড়ে গজপাথর।পাহাড় ও অরণ্যের মাঝে আদিবাসীদের ছোট ছোট গ্ৰাম। চাষবাস, পশুচারণ ও জঙ্গলের কন্দ সংগ্ৰহ করে জীবনধারণ করেন সেইসব গ্রামের বাসিন্দারা। ধান ছাড়া আর কিচ্ছু চাষ হয়না। বৃষ্টি কম হলে ধানও ভালো হয়না। গ্ৰামেরআদিবাসী মানুষরা জানেননা সেচ ও পানীয় জলের জন্য কাকে বলতে হবে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, মেঘরামের বাণে জল হলে চাষবাস হবে। গজপাথর এলাকার বছর পঞ্চাশের শত্রুঘ্ন গোয়ালা বলেন,এখানেবৃষ্টির জলে বছরে একবার মাত্র ধান চাষ হয়। বৃষ্টি কম হলে পাথুরে শক্ত জমিতেসেই ফলনও ভালোকরে  হয়না। জঙ্গল থেকে শুকনো গাছ কেটে বিক্রি করে রোজগার হতো। গাছ কাটলে রেঞ্জারবাবুরা এসে ধরে নিয়ে যায়। সাব মার্সিবল বসালে চাষবাস হতো। কাকে সেই কথা বলব আমাদের জানা নেই।মেঘরামের কাছে শুধু প্রার্থনা করি, বৃষ্টি যেন ভালো হয়। অপর বাসিন্দা সুশান্ত গোয়ালা বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার বৃষ্টি ভালো হয়েছে।নব্বই দিনের মধ্যে ললাট, মাম্পি গোল্ড চাষ হয়। আশা করছি এবার ফলন ভালো হবে। ফলন ভালো না হলে সংসার চালানোর জন্য শহরে কাজ করতে যেতে হবে। প্রশাসন সেচ ও পানীয় জলের জন্য সাব মার্সিবল বসিয়ে দিলে ভালো হয়। খট্টাধরা গ্ৰামের গৃহবধূ আহ্লাদি সরেন বলেন, আমাদের এই এলাকায় জলের খুব অভাব। বৈশাখ মাসে গ্ৰামের  মেয়েরা দূর থেকে খাবার জল নিয়ে আসে। গ্ৰামের পুরুষ মেয়েরা দলবেঁধে খুব কষ্ট করেচাষের জন্য জমি তৈরি করে। বৃষ্টির যে জল ধরে রাখি তাই দিয়ে চাষ হয়। চাষ বলতে শুধু ধান। নুড়ি পাথরের জমিতে শাকসবজি ভালো হয়না। রেশনের চালে কোনওরকম চলে। বিনপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশচন্দ্র সর্দার বলেন, শিমূলপাল গ্ৰাম পঞ্চায়েতের গজপাথর এলাকার পাথুরে জমির কারণে সাবমার্সিবল বসানো যায়না। জলের অভাবে চাষবাসও ভালো হয়না। পরিস্রুত পানীয় জলেরও অভাব।
  • Link to this news (বর্তমান)