নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাসের তৃতীয় দিন মন্দির থেকে রাধাকৃষ্ণকে আনা হয় রাসমঞ্চে। সারারাত থাকেন তাঁরা। ভক্তরা সেবা করেন। নাম‑গান চলে। পরেরদিন ভোরবেলা ঠাকুর ফেরেন মন্দিরে। রাত জেগে ক্লান্ত। ফলে বিশ্রামের জন্য দেরিতে খোলা হয় মন্দিরের দরজা। তারপর দুপুরে ভোগ দেওয়া হয়। রাস উৎসবে ৭৫ কিলো বাতাসাও বিলি হয়।
২০০ বছরেরও পুরনো কাশীপুর রাসবাটি। সেখানে ১২ দিন ধরে চলে রাস উৎসব। সুসজ্জিত সিংহাসনে রাজবেশে থাকেন রাধাকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের নাম গোপীনাথ। লুটের বাতাসা ভক্তদের কাছে ‘মহার্ঘ্য প্রসাদ’। ভক্তিসহকারে আঁচলে বাঁধেন কেউ। কেউ শালপাতার বাটি করে বাড়ি নিয়ে যান। উত্তর কলকাতায় রতনবাবু রোডে এ সময় প্রচুর ভিড়। রাসবাটির পক্ষ থেকে সেবায়েত তুষার দে বলেন, ‘দুপুরের ভোগের পর সন্ধ্যায় ফের সুসজ্জিত বেশে ভক্তদের দর্শন দিয়ে থাকেন। ভক্তরা তাঁদের শ্রীচরণে নিবেদন করেন সুগন্ধি পুষ্প, ফল, মিষ্টি ও আতর।’ রাসবাটি মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের অন্যান্য দিন রাধা‑কূষ্ণকে নিবেদন করা হয় সাধারণ ভোগ। রাসের সময় বিশেষ ভোগ। দেওয়া হয় নানা ধরণের ফল, মিষ্টি। ভোগে নিবেদন করা হয় লুচি, সুজি, পাঁচরকম ভাজা, একাধিক তরকারি, পনির, ধোকার ডালনা প্রভৃতি। প্রতিদিন নানান বেশে সাজানো হয় ঠাকুরকে। গোধূলি দে নামে রাসবাটির এক সদস্য বলেন, ‘উৎসবের সময় বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে সাজানো হয় রামায়নের নানা কথা ও কাহিনি। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় নাটমন্দির চত্বরে হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আর থাকে পালা কীর্তন। সেই তালিকায় রয়েছে, ‘রাসলীলা’, ‘মাথুরলীলা’, ‘নৌকাবিলাস’, ‘নিমাই সন্ন্যাস’ প্রভৃতি। পালা শুনতে কলকাতা তো বটেই শহরতলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন বহু মানুষ।’
উৎসব ঘিরে এখানে বসে শতাধিক দোকান। নানা সামগ্রী বিক্রি হয়। রতনবাবু রোডের দু’ধারে বসে খাবারের স্টল। উৎসবের প্রথম চারদিন হয় আতসবাজির প্রদর্শনী। বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে রাস। উৎসব চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। এখন ফুল‑মালা, লতাপাতা ও নানা আলোর মেলায় সেজে উঠছে রাসবাটি চত্বর। নিজস্ব চিত্র