পড়ুয়াদের ক্ষতি নয়, স্কুল সচল রেখেই এসআইআরে শিক্ষকরা
প্রতিদিন | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
শেখর চন্দ্র, আসানসোল: আসানসোলের একাধিক স্কুলে সব শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে বিএলও-র দায়িত্ব। ফলে পঠনপাঠন শিকেয় ওঠার জোগাড়। তবে শিক্ষকদের একাংশ জানান, স্কুল বন্ধ না রেখে ভাগাভাগি করে বিএলও-র দায়িত্ব সামলাতে চান। হীরাপুর চক্রের চাপড়াইদ প্রাথমিক স্কুলে দুই জন শিক্ষক। পড়ুয়ার সংখ্যা ৫১। এক্ষেত্রেও দু’জনেরই বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পড়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ডাবলু নাথ বলেন, “স্কুল চালানো যথেষ্ট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এত কম সময়ে কাজটি সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়েও আমি আশঙ্কা করছি।” শিক্ষক বলেন, “আমি যে অঞ্চলে দায়িত্ব পেয়েছি, আমার স্কুল থেকে সেটি ১৫ কিলোমিটার দূরে। আমার বাসস্থানের কাছে। সেই অঞ্চলটি আবাসন এলাকা। ফলে বেশিরভাগ মানুষই সারাদিন চাকরি করতে চলে যান। তাঁদেরকে বাড়িতে পাওয়াই যাবে না। ফলে কাজটি কী করে করব, সেটা ভেবেই আমরা আকুল হচ্ছি। অন্যদিকে স্কুলের কাজ। পড়ানো মিড-ডে মিল সমস্তটা সামলাতে হবে। সিলেবাস শেষ হবে কি না, সেটাই চিন্তার। এই অবস্থায় শিক্ষা দফতর থেকে যদি ডেপুটেশন ভিত্তিতে শিক্ষক দেওয়া হতো, তাহলে এসআইআর-এর কাজ সুবিধাজনক হতো।”
মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এসআইআরের কাজ। বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিল করবেন প্রথমে। পরবর্তীকালে সেই ফর্ম নিয়ে আসা-সহ বিভিন্ন কাজ রয়েছে। গোটা এসআইআর-এর সময়কাল জুড়ে মূলত বিএলও-দের এই কাজ করতে হবে। বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের। যেখানে স্কুল শিক্ষক পাওয়া যায়নি, সেসব ক্ষেত্রে আইসিডিএস কর্মীদের এই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে।
আসানসোল গ্রামে নামোপাড়ায় ফটিকচন্দ্র স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হীরাপুর চক্রের এই প্রাথমিক বিদ্যালয় দু’জন শিক্ষক রয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২৬। এই দু’জন শিক্ষককেই বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে তাঁরা স্কুল চালাবেন কী করে? স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিয় মণ্ডল বলেন, “স্কুলে দু’জন শিক্ষক। আমরা দু’জনেই বিএলও-র দায়িত্ব পেয়েছি। এক্ষেত্রে সমস্যা হলেও দু’টি দিক আমাদেরকে সমানভাবেই চালাতে হবে। এমনটাই নির্দেশিকা আমাদের কাছে রয়েছে। ফলে স্কুল ছুটির পরে, কিংবা ছুটির দিনে এসআইআর-এর কাজ আমাদের করতে হবে। অতিরিক্ত দায়ভার নিয়েই এই কাজ করতে হবে। তবে একটা সুবিধে রয়েছে। আমাদেরকে আমাদের বাসস্থানের কাছাকাছি বিএলও করা হয়েছে। স্কুল থেকে যাওয়ার পর আমরা বিকেলে বা সন্ধ্যের দিকেও এই কাজ করতে পারব।”
ওই স্কুলের আরেক শিক্ষক অভিমন্যু শূর বলেন, “যেহেতু প্রধান শিক্ষক এবং আমাকে বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া করে কাজটা করতে হবে। কোনওদিন যদি প্রধান শিক্ষককে যেতে হল, সেদিন আমি স্কুল সামলাব। আবার যেদিন আমাকে যেতে হবে, সেদিন প্রধান শিক্ষক স্কুল পরিচালনা করবেন।” শিক্ষকদের বক্তব্য, স্কুল পরিচালনা মানে শুধুই তো পঠন-পাঠন নয়, রয়েছে মিড-ডে মিলের সামগ্রী নিয়ে আসা, রান্নার তদারকি করা, শিশুরা ঠিকমতো খেতে পারছে কি না, সেটা দেখা।
স্কুল চালানোর পাশাপাশি বিএলও-র দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষকেরা কার্যত দিশেহারা। ডুবুরডিহি প্রাথমিক স্কুলের অভিভাবক রঞ্জিত বাউরি বলেন, “আমরা অর্থের অভাবে সরকারি স্কুলে সন্তানদের পড়াতে পাঠাই। অথচ এভাবে লেখা পড়ার ক্ষতি করা হচ্ছে। বেসরকারি স্কুলে এমন তো হয় না”। তবে সমস্যার হাল বের করতে নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। তাঁরা ঠিক করেছেন, দিনের নির্দিষ্ট সময় ভাগাভাগি করে স্কুল করবেন ও বিএলওর দায়িত্ব পালন করবেন। এভাবে স্কুলের সব শিক্ষক শিক্ষিকাদের তুলে নেওয়া স্কুলের পঠন পাঠান বিঘ্নিত হবার উপক্রম প্রসঙ্গে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।