সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহল জেলা পর্যটন শিল্পে রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে। নদী, ঝরনা, পাহাড়, জঙ্গলের অসাধারণ সৌন্দর্যে পর্যটকদের ভিড় সারা বছর ধরে লেগেই থাকে। জেলায় ক্রমাগত বেড়েছে হোটেল, হোম-স্টের সংখ্যা। কিন্তু অভিযোগ, হাওড়া-টাটা শাখায় অনিয়মিত ট্রেন চলাচলের কারণে বিগত বছরের তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশ পর্যটক চলতি বছরে কম এসেছেন। নিয়মিত যাতে ট্রেন চালানো হয়, সেই দাবিতে এবার হোটেল মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশনের ডিআরএমকে মেল করা হল। একইসঙ্গে ঝাড়গ্রামের সাংসদ কালীপদ সোরেনকেও অবগত করা হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মতলা থেকে যাতে দু’টি এসি বাস চালানো হয়, সেই জন্য রাজ্য বনদপ্তরের মন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য রাজ্য পর্যটন মানচিত্রে একেবারে উপরের দিকে স্থান করে নিয়েছে। পর্যটকরা যাতে এখানে এসে ভালোভাবে থাকতে পারেন, সেই জন্য রাজ্য সরকারের সহায়তায় প্রচুর হোম-স্টে হয়েছে। সেই সংখ্যাটা দিনে দিনে বাড়ছে। অভিযোগ, কিন্তু বর্তমানে ট্রেনের যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে। হাওড়া থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যেই পর্যটকরা ঝাড়গ্রাম শহরে এসে পৌঁছন। মূলত সকালে ৬.২৫ নাগাদ হাওড়া বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ও সকালে ৬.৩৫ হাওড়া-ইস্পাত এক্সপ্রেস এই প্রধান দু’টি ট্রেনেই মানুষ আসেন। কিন্তু এই দু’টি ট্রেনই অনিয়মিত বা বন্ধ থাকায় কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামে আসা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে একটা অনিহা দেখা দিচ্ছে। হোটেল মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে ঝাড়গ্রামে হোম-স্টে ও হোটেলের সংখ্যা ছিল ৬৭টি, পর্যটক সংখ্যা ছিল প্রায় ৫২,০০০। ২০২১-২২ সালে সংখ্যা বেড়ে হয় ৯২টি, পর্যটক সংখ্যা ৮৭,০০০। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে হোম-স্টে ও হোটেল মিলিয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬০টি, পর্যটক সংখ্যা প্রায় ৯৫,০০০। পাশাপাশি ২০২৩-২৪ সালে মোট হোটেল ও হোম-স্টে বেড়ে হয় ২০০টি, এবং পর্যটক সংখ্যা ছুঁয়ে যায় ১,২০,০০০।
২০২৪-২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত হোম-স্টে ও হোটেল মিলিয়ে ২২০টিতে দাঁড়ায়। প্রায় ১.৫ লক্ষ পর্যটক ঝাড়গ্রাম ভ্রমণ করেন। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে হাওড়া ও ঝাড়গ্রামের রেল যোগাযোগ অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর-মাত্র সাত মাসে পর্যটক সংখ্যা নেমে এসেছে ২০ থেকে ২২ হাজারে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম। ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মধুসুদন কর্মকার-সহ ঝাড়গ্রামের হোম-স্টে, হোটেল মালিক, রিসর্ট উদ্যোক্তা এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা একযোগে জানিয়েছেন, “রেল পরিষেবার উন্নতি ও বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু না হলে ঝাড়গ্রামের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড়সড় ধাক্কা লাগবে।” মধুসুদনবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তাঁরা রেল, সাংসদ, রাজ্য বন দপ্তরের মন্ত্রীকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, রাজ্য বন দপ্তরের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, “ট্রেন প্রচণ্ড পরিমাণে অনিয়মিত চলছে। এটা একটা জলন্ত সমস্যা। মানুষ প্রচুর সমস্যায় পড়ছেন। হাওড়া, খড়গপুর থেকে যাঁরা নানা প্রয়োজনে ঝাড়গ্রামে আসেন, তাঁরা নিত্যদিন সমস্যায় পড়ছেন। হোটেল মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। আমি দেখছি যাতে সকালের দিকে ধর্মতলা থেকে আপাতত একটি এসি বাস যাতে চালানো যায়। পরিবহণ দপ্তরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব অবশ্যই