• হাওড়ায় সিনার্জি ঘিরে কর্মবিপ্লব! দশ হাজার কোটির লগ্নি, ৫২ হাজার কাজের ঘোষণা
    প্রতিদিন | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
  • অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: আগামী দুই থেকে তিনবছরে হাওড়া জেলায় শিল্পে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫২ হাজার। সোমবার হাওড়ার শরৎসদনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প তথা এমএসএমই দপ্তরের সিনার্জি থেকে একথা ঘোষণা করা হল। যা ঘিরে নতুন করে শিল্পের জেলা হাওড়ার ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের ভবিষ্যৎ পুনরুজ্জীবন নিয়ে আশার আলো তৈরি হয়েছে।

    সোমবার সিনার্জি থেকে জেলার ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্কঋণের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। এতে উপকৃত হবেন হাওড়া জেলার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাঁরা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কীভাবে সাহায্য পাবেন এদিন এই স্টলগুলি থেকে সেই পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি এদিন হাওড়ার সিনার্জি থেকে উদ্যোক্তাদের ব্যবসার জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কীভাবে নতুন করে ব্যবসা করা যায় বা কীভাবে ব্যবসাকে আরও বাড়ানো যায় ও রাজ্য সরকার কীভাবে ছোট উদ্যোক্তাদের পাশে থাকতে পারে এদিন প্রশাসনের আধিকারিকরা উদ্যোক্তাদের তা বুঝিয়ে দেন।

    ব্যাঙ্ক ঋণের পাশাপাশি এদিন শরৎসদনে উপস্থিত উদ্যোক্তাদের হাতে ব্যবসার জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের যেমন ভূমি, বিদ্যুৎ, অগ্নিনির্বাপণ দপ্তরের ছাড়পত্র তুলে দেওয়া হয়। হলে সিনার্জি অনুষ্ঠিত হয়। সেইসঙ্গে হলের বাইরে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা স্টল দেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের তরফেও স্টল দেওয়া হয়। নতুন উদ্যোক্তারা কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন বা পুরনো উদ্যোক্তারা কীভাবে ব্যবসা শুরু করে জেলার ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন ও চেম্বারের প্রতিনিধিরা।

    জেলাজুড়ে ক্লাস্টারগুলিতে দেওয়া হবে আরও অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ। পুনরুজ্জীবিত করা হবে মেটাল ফেব্রিকেশন ক্লাস্টার। জেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলেও সারা রাজ্যে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বলে এদিন রাজ্য সরকারের এমএসএমই দপ্তরের তরফে জানানো হয়। সিনার্জিতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায়, ডব্লুবিএসআইডিসিএলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়প্রকাশ মজুমদার, হাওড়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য, উলুবেড়িয়ার বিধায়ক নির্মল মাজি, রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব তথা এমএসএমই দপ্তরের সচিব রাজেশ পাণ্ডে, হাওড়ার জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া। ছিলেন জেলার অন্যান্য বিধায়ক ও জেলা প্রশাসনের কর্তা থেকে

    প্রসঙ্গত, ফাউন্ড্রি পার্ক, রবার পার্ক, ফুড পার্ক, জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি পার্কের মতো পার্ক রয়েছে হাওড়ায়। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প রয়েছে। বালিটিকুরি, সাঁকরাইল, অন্তরহাটি, উলুবেড়িয়ার মতো এলাকায় এই পার্ক ও শিল্পগুলি থাকায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে। এদিন সিনার্জি থেকে মূলত ভূমি, দূষণ, বিদ্যুতের জন্য যে সমস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছাড়পত্র চেয়েছিলেন তাঁদের সেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ফ্যাক্টরি লাইসেন্সের ছাড়পত্রও দেওয়া হয়।

    এই প্রসঙ্গে সচিব রাজেশ পাণ্ডে এদিন বলেন, “গত এক মাসে এভাবে হাওড়া জেলায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রায় ৭ হাজার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।” একসময় পাঁচশো বছরেরও পুরনো শিল্প শহর হিসাবে চিহ্নিত হাওড়া জেলাকে বলা হত ‘প্রাচ্যের শেফিল্ড’। সেই শেফিল্ডেই শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সচিব রাজেশ পাণ্ডে এদিন আরও বলেন, “আশা করা যাচ্ছে এ বছর হাওড়া জেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায় উৎসাহিত করা যাবে।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)