পিয়ালী মিত্র: পুলিসের হাত থেকে বাঁচতে সামান্য এক মুরগি বিক্রেতার এমন পরিকল্পনায় তাজ্জব পুলিসও। যদিও এত সব পরিকল্পনা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। হরিদেবপুর মহিলার উপর গুলি চালানোর ঘটনায় সোমবারই গ্রেফতার হয়েছিল মূল অভিযুক্ত মুরগি বিক্রেতা বাবলু। রাতে গ্রেফতার হয় বাপ্পা দাস। বাবলুর কথা মতো বাপ্পাই গুলি চালায় মহিলার উপর। পুলিস সূত্রের খবর, দুজন অভিযুক্ত একে অপরের পূর্ব পরিচিত।
জেরায় ধৃত বাপ্পার দাবি, বন্ধুকে সাহায্যর জন্য সে এই কাজ করেছে! যদিও তা মানতে নারাজ তদন্তকারীরা। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে বাবলু ও বাপ্পার কন্ট্রাক্ট হয় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে সেটা কত টাকা তা জানার চেষ্টা করছেন। বাপ্পার দাবি যে অস্ত্র দিয়ে সে গুলি চালায়। সেটি সরশুনার বাসিন্দা এক যুবকের। তাঁর মৃত্যু হওয়ার পর সেই অস্ত্রটি তার কাছে ছিল। সেটাই কাজে লাগায়। ইতিমধ্যেই অস্ত্রও উদ্বার করেছে পুলিস।
সূত্রের খবর, মুরগি বিক্রেতা বাবলুর স্ত্রী মারা গিয়েছে ৯ বছর আগে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে আহত মহিলার স্বামী ও দুই সন্তান রয়েছে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই সম্পর্ক আর রাখতে চাইছিলেন না মহিলা। কিন্তু তা মানতে রাজি ছিল না বাবলু। এরপরই মহিলাকে গুলিকে খুনের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা কার্যকর করতে বাপ্পার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে পুলিসের হাত থেকে বাঁচতে সব রকম ফন্দি করে ফেলে বাবলু।
বাবলু জানত মহিলা রোজ মর্নিং ওয়াকে যান। সেখানে কোথায় সিসিটিভি নেই তা আগে থেকে রেইকি করে চিহ্নিত করে ফেলে। অপরাধ সংগঠিত করতে যে বাইক ব্যবহার করা হয়, সেটির নম্বর প্লেট আগে থেকে বদল করে দেওয়া হয়। যাতে নম্বর প্লেটের সূত্রে পুলিস না ধরতে পারে। এমনকী, যখন গুলি চালানো হয় সে সময় বাবলু নিজে সেখানে উপস্থিত ছিল না। বরং ওই সময় যে সে অন্য জায়গায় ছিল প্রমাণ হিসেবে সেই অজুহাত তৈরি রেখেছিল। যাতে টাওয়ার লোকেশন বা অন্য কিছু দিয়ে ঘটনাস্থল তার উপস্থিতি প্রমাণ না থাকে।
সম্প্রতি, কৃষ্ণনগরে বাড়িতে ঢুকে প্রেমিকাকে গুলি করে খুন করে এক কলেজ ছাত্র। খুনের আগের এবং পরে পালিয়ে থাকতে যে নিখুঁত পরিকল্পনা সে করেছিল তা যেন কোনো পাকা মাথার অপরাধীকে হারিয়ে দেওয়ার মতো। কিছু দিন আগে প্রেমে প্রত্যাখিত হয়ে প্রেমিকার বাড়িতে এসে গুলি চালায় । সেই যুবক কোনও ক্রিমিনাল নয়। বেঙ্গালুরুতে একটি স্টার্টআপের মালিক। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে একজন মুরগি বিক্রেতার এই প্ল্যান। কার্যত সুপারি দিয়ে খুনের চেষ্টা। পুলিস মহলের মতে, পাকা অপরাধী না হলে- সাধারণ মানুষ বিভিন্ন অপরাধ ফুল ফ্রুফ ব্লু প্রিন্ট তৈরি করছে তা চমকে ওঠার মতো। বর্তমানে বিভিন্ন ওটিটিতে ক্রাইম সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য তুলে ধরা হয়। সে সবের প্রভাবেই এধরনের পরিকল্পনা সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।