• ‘থালা-বাটি বেচেও সাধারণ মানুষকে সাহায্য করব’, SIR আবহে আশ্বাস মমতার
    এই সময় | ০৪ নভেম্বর ২০২৫
  • রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) চালু হওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃত্যু সংবাদ এসেছে। মৃত্যুগুলির নেপথ্যে রয়েছে SIR নিয়ে আতঙ্ক, এই দাবিতে সরব হয়েছিল তৃণমূল। এই আবহে জোড়াসাঁকোর মঞ্চ থেকে মঙ্গলবার কী বার্তা দিতে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সে দিকে ছিল সব নজর। এ দিন বক্তব্য শুরুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অসংগঠিত সেক্টরে বহু মানুষ কাজ করেন। তাঁরা আশঙ্কায় রয়েছেন SIR তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে। আতঙ্কে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরাও। মনে রাখবেন বাংলা ভাষায় কথা বললে কেউ বাংলাদেশি হয়ে যান না। হিন্দি ভাষায় কথা বললে পাকিস্তানি হয়ে যায় না।’ বিজেপি নেতাদের ‘মুর্খ’, ‘অর্ধশিক্ষিত’ বলে দেশভাগের আগে ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’-র প্রসঙ্গও তোলেন মমতা।

    এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে AI ব্যবহার করে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমি যা মন্তব্য করি, সেটা পুরোটা দেখানো হয় না। এখন AI ব্যবহার করে। আমার মতো ছবি দেখাবে, আর উল্টো পাল্টা বলবে। ফেক নিউজ গিয়ে ট্রোল করে।’

    মঞ্চ থেকে বিজেপি নেতাদের ঝাঁঝাল আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিজেপিতে কয়েকটা গদ্দার রয়েছে। যাকে যা ইচ্ছে বলে দেয় এজেন্সির মাধ্যমে। ৮০টা গাড়ি নিয়ে ঘোরে। সোমবার কোনও একজন বাবু বলছেন, তিনি একটি জেলায় যাবেন। সেখানে যেন ভিড় না থাকে। সাহস থাকলে মানুষের মধ্যে গিয়ে মিশে দেখান।’

    বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ঝাঁঝালো করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘দালালির সীমা থাকে। আপনারা অত্যাচারের সব সীমা পার করে গিয়েছেন।’ নরেন্দ্র মোদীকে সরাসরি আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, তিনি টেলিপ্রম্পটার ব্যবহার করে নিজের বক্তব্য রাখেন। নোটবন্দি করেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কালো টাকা ফেরাতে পারেনি বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির মধ্যেই বিভেদ রয়েছে, এই দাবি করেন তিনি।

    এ দিন নাম না করে বিজেপির রাজ্যের এক শীর্ষ স্তরের নেতাকে তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘অভিষেককে (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) বলছে তোর পিসির বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট নিয়ে আয়। ওঁরা সম্মান দিতে জানেন না। দেবে কী করে! বাবাকে মন্ত্রী করা হয়েছিল বলে ছেলে যায়নি। তাদের থেকে আর কী আশা করা যায়।’

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘২০০২ সালের ভোটার তালিকায় দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের নাম নেই। বাড়িকে বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর নাম ওড়াতে পারলে এরা সকলের নাম ওড়াতে পারে। ১৯৮৯-এ সল্টলেকে চলে যান তিনি। তাঁর আদি বাড়ি ছিল শ্যামপুকুর। ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর বাড়ির কারও নাম নেই। সল্টলেকের বাড়িও লোপাট।’

    এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০০১-এ নির্বাচনের পর শেষবার SIR হয়েছিল। বাংলায় ২০০২-২০০৩ সালে কোনও ভোট ছিল না। SIR হওয়ার পর ২০০৪ সালে নির্বাচন হয়। দুই-আড়াই বছর ধরে কাজ চলেছিল। তা হলে আজ তাড়া কীসের? একজন যোগ্য ভোটারেরও নাম বাদ গেলে বিজেপি সরকার ভেঙে ছাড়ব।’

    সকলকে যাতে ব্যক্তিগত তথ্য না দেন, সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন মুখ্যমন্ত্রী। উচিত লোককেই তা দেওয়ার কথা বলেন। এ দিনের সভা থেকে মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি থালা-বাটি বেচেও সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

  • Link to this news (এই সময়)