বঙ্গ বিজেপিতে জল্পনা তুঙ্গে, দল চাইলে মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি মিঠুন
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
বছর ঘুরতেই রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন। বঙ্গের রাজনৈতিক শিবিরও সরগরম। আলোচনা— ২০২৬-এ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে বিজেপির মুখ কে? শুভেন্দু অধিকারী, না কি অন্য কেউ? এই প্রশ্নের মাঝেই মিঠুন চক্রবর্তীর মন্তব্য ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে। মালদহে দলের একটি বিজয়া সম্মিলনীতে বিজেপি কর্মীরা সরাসরি অভিনেতা–নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেন। আর সেই প্রস্তাব লুফে নিয়ে মিঠুন বলেন, ‘দল যদি চায়, আমি মুখ্যমন্ত্রী হব’।
প্রসঙ্গত, সোমবার মালদহের সাহাপুরের একটি বেসরকারি হোটেলে বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী-সহ একাধিক শীর্ষনেতা। সভা চলাকালীনই কর্মীদের একাংশ মিঠুনকে সামনে এগিয়ে এনে ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান বলে মত প্রকাশ করেন। কর্মীদের এই প্রস্তাব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মিঠুন বলেন, ‘আমাদের পার্টিতে এই সব হয় না। আমাদের পার্টিতে সবাই লড়ে। জিতে আসার পর দলের যা সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই হবে। দল চাইলে আমি হব, দল অন্য কাউকে চাইলে তিনিই হবেন।’
মিঠুনের এই বক্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা চরমে। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগ্রহ রয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীরও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন— বঙ্গ বিজেপিতে কি শুভেন্দু অধিকারীর পরিবর্তে কর্মীদের বড় অংশ মিঠুনকেই চাইছেন? নাকি মিঠুন নিজেই দলীয় সমীকরণের কেন্দ্রে আসতে চাইছেন?
বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। কারণ এর আগেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতগুলো রাজ্যে নির্বাচন লড়ছি, কোথাও কি কাউকে মুখ করা হয়েছে? পার্টি যদি মনে করে তাহলে করতে পারে।’ শমীকের এই উপলব্ধি কার্যত দিল্লির নেতৃত্বের কাঁধেই বল ঠেলে দেওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, মিঠুনকে প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া—বঙ্গ বিজেপির অন্দরে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এর ফলে অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে দলের ভরসা কি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে? আবার কেউ কেউ মনে করছেন, কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব না দিলেও, প্রস্তাবটি দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার টানাপোড়েনকেই প্রকট করছে।
তবে বঙ্গ বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী থেকে শমীক ভট্টাচার্য— নেতৃত্বের সমীকরণে বারবার বিতর্ক তৈরি করেছে। কখনও সম্পর্কের শীতলতা, কখনও প্রকাশ্য বিরোধ— সবই সামনে এসেছে। এবার মিঠুনের মন্তব্য আরও একবার সেই পুরনো প্রশ্নকেই সামনে এনে ফেলল। ২০২৬-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের প্রকৃত মুখ কে?
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য এই বিষয়ে এখনও একেবারে নীরব। কিন্তু দলের তৃণমূল স্তরে জল্পনা তুঙ্গে— মিঠুন কি তবে বিজেপির ‘নতুন মুখ’? না কি এটি শুধুই কর্মীদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ? উত্তর দেবে সময়ই।