এসআইআর নিয়ে ‘মোদীবাবু’, ‘মীরজাফর’ এবং ‘কুর্সিবাবু’-কে তোপ মমতার
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার মহানগরের রাজপথে জনসমুদ্র। এসআইআরের বিরোধিতায় প্রতিবাদে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিল শেষে মঞ্চ থেকে গর্জে উঠলেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তোপ দাগেন তিনি। হাজার টাকা দিয়ে আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছিল। এখন আধার কার্ডকে কেন নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে ধরা হবে না সে নিয়ে অভিযোগ করেন মমতা। স্বাধীনতার এতদিন পর কেন বাংলার মানুষদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে তা নিয়েও গর্জে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মোদী সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ‘একসময় টাকা দিয়ে আধার কার্ড তৈরি করিয়েছিল বিজেপি সরকার। এখন বলছে, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। ২ কোটি নাম বাদ না দিলে এরা ভোটে জিতবে না।‘ তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘আমরা এই নাম বাদ দেওয়ার খেলা ধরে ফেলেছি। বিহারে যেমন ইচ্ছে নাম বাদ দিয়েছে।‘
এসআইআর করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের তিনমাস আগে কেন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হল কেন্দ্রের কাছে জবাব চাইলেন মমতা। লোকসভা ভোটের পর কেন এসআইআর হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিন মমতা বলেন, ‘এই ভোটার তালিকা বাতিল হলে কেন্দ্রীয় সরকারও বাতিল হোক।‘
অসমকে কেন এসআইআরের তালিকা থেকে বাদ রাখা হল প্রশ্ন তোলেন মমতা। সেই সঙ্গে একযোগে মোদী, অমিত এবং নির্বাচন কমিশনারকে নিশানা করেন তিনি। ‘মোদীবাবু’, ‘মীরজাফর’ এবং ‘কুর্সিবাবু’ বলে তোপ দাগেন। নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে উদ্দেশ্য করে শ্লেষ মিশিয়ে মমতা বলেন, ‘মোদীবাবুদের খুশি করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।‘
এরপর বিহারের এসআইআর প্রসঙ্গ তুলে রোহিঙ্গা নিয়ে প্রশ্ন করেন মমতা। বিহারে ইতিমধ্যেই এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিবিড় সংশোধনের পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় প্রায় ৪৭ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। ৪৭ লক্ষের মধ্যে ঠিক কতজন বাংলাদেশি? বা ঠিক কতজন বিদেশি ভোটার, সেটার স্পষ্ট উত্তর নির্বাচন কমিশন দিতে পারেনি। সেই ইস্যু তুলেই মমতার প্রশ্ন, বিহারে তো ঘটা করে এসআইআর হল। কতজন বিদেশি ধরা পড়ল?
গিরিশ পার্কের মঞ্চ থেকে একযোগে বিজেপি-নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা বলছেন বাংলায় নাকি প্রচুর রোহিঙ্গা ঢুকে গেছে। প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকে গেছে। এসআইআর নাকি বাংলাদেশি খুঁজবে। বিহারে তো এসআইআর হয়েছে, কতজন বাংলাদেশি ছিল? রোহিঙ্গা খুঁজে পেয়েছেন? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ২-৪ জন রোহিঙ্গা এসেছে, তারা তো জেলে! ভোটার তালিকায় কী করে আসবে?’
বাংলায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে বারবার বিভাজনের রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। যদিও শাসকদল বরাবর তার বিরোধিতা করেছে। রাজ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তত্ত্ব মনগড়া বলে দাবি শাসকদলের। বাংলায় মায়ানমারের সীমান্তই পড়ে না। ফলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রশ্নই নেই। এদিন এসআইআর বিরোধী মিছিল থেকেও সে কথা সাফ জানিয়ে দেন মমতা।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে তোপ দেগে বলেন, ‘কুর্সিবাবুকে প্রশ্ন, বাংলায় যদি রোহিঙ্গা আসে, তারা কোথা থেকে আসবে? নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, অসমে এসআইআর হল না কেন? শুধু বাংলায় ভোটের আগে এসআইআর কেন?’ তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, ‘বিজেপি বঙ্গে ২ কোটি ভোটারের নাম কাটার ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাকে কব্জা করতে চায়। ভোটে জিততে না পেরে, ঘুরপথে বাংলাকে শায়েস্তা করতে চাইছে।‘
ভোটার তালিকা থেকে একটাও নাম বাদ গেলে সরকার ভেঙে চুরমার করার হুঁশিয়ারি মমতার। তাঁর কথায়, ‘জনগণ ভুল করলে নাম বাদ দিচ্ছে। বাবা-মায়ের নাম না থাকলে কি আবার জন্মে প্রমাণ করতে হবে আমি বাংলার নাগরিক? কমিশন যে একাধিক গন্ডগোল করছে তালিকায়, তার বেলা? শাস্তি কে দেবে? ভোটের পর এসআইআর করলে কী সমস্যা হত? তা নয়। ওদের কত বাবু, বড় বাবু, ছোটো বাবু…আমি চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু দালালিরও একটা সীমা থাকে। অত্যাচারের সব সীমা তো আপনারা পার করে ফেলেছেন।’
মমতার আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘কমিশন তো বলেই দিয়েছে একজন ভারতীয়র নামও বাদ যাবে না, যারা নাগরিক নন তাদের বাদ যাবে। এদের ভোট বাঁচাতে আপনি এত মরিয়া কেন? কী পান এদের থেকে?’ এসআইআর কেন সে প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘কমিশন সময়ে সময়ে অনেক পরিবর্তন করে। ব্যালট থেকে তো ইভিএম হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত। তৃণমূল জলাতঙ্কের মত এসআইআর আতঙ্কে ভুগছে।‘