ঠাকুর বাড়ির ফাটল আরও চওড়া! শান্তনুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে একই নামে নতুন কমিটি সুব্রত ঠাকুরের
প্রতিদিন | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাসত: এসআইআর আবহে আরও চওড়া হল মতুয়া ঠাকুর বাড়ির ফাটল! কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সংঠনের বিরুদ্ধে দালাল চক্র-সহ সংগঠনের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে নতুন কমিটি গঠন করলেন গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক দাদা সুব্রত ঠাকুরের। একই সংগঠনের নামে, একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরে, নতুন কমিটি গঠন করলেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরনগরের ঠাকুর বাড়িতে কয়েকশো মতুয়ার উপস্থিতিতে তৈরি নতুন সংগঠনের সংঘাধিপতি হলেন সুব্রত ঠাকুর। সভাপতি হয়েছেন দলপতি বৈদ্যনাথ বালা। কার্যকরী সভাপতি হয়েছেন কৃষ্ণপদ মণ্ডল ও সৈকত মণ্ডল। প্রধান সেবায়েত মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন সুব্রতর মা ছবিরানি ঠাকুর। নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা মঞ্চে হাজির ছিলেন শান্তনু বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুই বিধায়ক স্বপন মজুমদার এবং অসীম সরকার।
সুব্রত বলেন, “শান্তনু ঠাকুরের সংগঠনে আর কাজ করা যাচ্ছিল না। সংগঠনে দালাল রাজ ভরে গিয়েছে, অর্থ নয়ছয় হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে বারবার বলেও কাজ হয়নি। তাই সংগঠন ও নতুন কমিটি গঠন করেছি। এই সংগঠন মতুয়াদের স্বার্থে কাজ করবে।” এই প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুর জানালেন, “আলাদা সংগঠন করার অধিকার সকলেরই আছে। তবে, শুধু সংগঠন তৈরি করলেই হবে না, নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হবে।” এতদিন ঠাকুর বাড়িতে মতুয়াদের তৃণমূল ও বিজেপি প্রভাবিত দু’টি সংগঠন ছিল। এসআইআরের প্রতিবাদে মমতাবালা ঠাকুরের অনশনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন ভেঙে যাওয়া নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তা অন্য মাত্রা নেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, এসআইআরের বিরোধিতায় বুধবার থেকে অনশনের ডাক দিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতাবালা ঠাকুর। সুব্রতকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতা বালা ঠাকুর বলেন, “সত্যি কথা বলার জন্য সুব্রতকে ধন্যবাদ। ও বাড়ির বড় ছেলে, সংগঠন করেছে। তাই ওঁর অধিকার আগে। ও নিজের অধিকার বুঝে নিয়েছে।”
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ গঠন তৈরি করেন। সংঘাধিপতি হন ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। তাঁর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ তৃণমূলের শাসনকালের প্রথমদিকে মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বড়মার মৃত্যুর পর সংগঠনের সংঘাধিপতি হন কপিলের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর। ওই সময় সংগঠনের দখলদারি নিয়ে বিবাদের জেরে তৃণমূল ছাড়েন মঞ্জুল। কিন্তু তিনি আলাদা কোনও সংগঠন করেননি।
পরে তৃণমূলের সমান্তরাল সংগঠন অবশ্য শুরু করেছিলেন মঞ্জুলের বড় ছেলে সুব্রত ঠাকুর। ২০১৯ সালে শান্তনু ঠাকুর বিজেপির টিকিটে বনগাঁ লোকসভার সাংসদ হয়ে সুব্রতর সংগঠন ‘হাইজ্যাক’ করে সংজ্ঞাধিপতি হন বলে অভিযোগ ওঠে। সুব্রতকে ওই সংগঠনের মহাসংঘাধিপতি করা হলেও তার কোনও ক্ষমতা ছিল না। এই নিয়ে বিবাদের আবহে বিগত মাস দুই আগে ঠাকুর বাড়িতে সিএএতে আবেদনের জন্য দু’টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাম্প করেছিলেন শান্তনু ও সুব্রত। মঞ্জুলের স্ত্রী ছবিরানি ঠাকুর বড় ছেলে সুব্রতকে সমর্থন করায় দুই ভাইয়ের বিবাদ আরও চওড়া হয়। এরপর এদিন সুব্রত নিজে আলাদা সংগঠন এবং নতুন কমিটি ঘোষণা করলেন করায় বিবাদ চূড়ান্ত আকার নিল।