বৈষম্যের ভয়াবহ চিত্র বিশ্বজুড়ে, ২৪ বছরে নয়া সম্পদের ৪১ ভাগই ১ শতাংশের হাতে, ভারতে ধনীতম ব্যক্তিদের সম্পত্তির বৃদ্ধি ৬২ শতাংশ
বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে বিশ্বজুড়ে! বাদ নেই ভারতও। জি-২০ প্রকাশিত নয়া রিপোর্টে সামনে এল উদ্বেগজনক চিত্র। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদিত নতুন সম্পদের ৪১ শতাংশই গিয়েছে বিশ্বের ধনীতম ১ শতাংশের হাতে। বিশ্ব জনসংখ্যার একেবারে নীচের স্তরে থাকা অর্ধেক মানুষের কাছে এসেছে ছিটেফোঁটা, মাত্র ১ শতাংশ। পৃথকভাবে ভারতের বৈষম্যের চিত্রটাও সমান শোচনীয়। রিপোর্টটিতে দাবি করা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতের ধনীতম ১ শতাংশের সম্পদ বেড়েছে ৬২ শতাংশ।
জি-২০ গোষ্ঠীর বর্তমান প্রেসিডেন্সি রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে। বিশ্বজোড়া বৈষম্য সংক্রান্ত এই রিপোর্ট তৈরি করেছে নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজের নেতৃত্বাধীন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়া একটি কমিটি। সেই কমিটিতে ছিলেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষও। রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে বিষম্যের এই চিত্র ‘আপৎকালীন স্তরে’ পৌঁছে গিয়েছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বিপদের মুখে পড়ছে। পরিবেশ রক্ষায় যে অগ্রগতি এসেছিল, এর ফলে সেই সাফল্যও ঝুঁকির মুখে। রিপোর্টে আরও দাবি, ভারত ও চীনের মতো বড় দেশগুলিতে উর্পাজন বাড়ার ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈষম্য কিছুটা কমেছে। যদিও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির নিরিখে বিচার করলে অধিকাংশ দেশেই বৈষম্য তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধিই পেয়েছে। ভারতে ধনীতম ১ শতাংশের সম্পদ বেড়েছে ৬২ শতাংশ। চীনে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ।
জি-২০ প্রকাশিত এই রিপোর্টে সুপারিশ, সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ইনইক্যুয়ালিটি’ (আইপিআই) নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। এই সংস্থা বিশ্বজুড়ে আর্থিক বৈষম্য সংক্রান্ত প্রবণতার উপর নজর রাখবে, প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণে সরকারগুলিকে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে সাহায্য করবে। পাশাপাশি রিপোর্টে উঠে এসেছে আরও কিছু তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য। বলা হয়েছে, যেসব দেশে আর্থিক বৈষম্য অত্যন্ত বেশি সেই দেশগুলিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশের অবনতির আশঙ্কা সাত গুণ বেশি। ২০২০
সাল থেকে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র দূরীকরণের প্রক্রিয়ার অগ্রগতি থমকে গিয়েছে। কিছু দেশে বরং তা পশ্চাদমুখী হয়েছে। ২৩০ কোটি মানুষ অন্ন সংস্থানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ২০১৯ সালের তুলনায় এই সংখ্যাটা ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ বেশি। এখনও বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও পান না। চিকিৎসার খরচ ১৩০ কোটি মানুষ দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়েছে।