মোদির ফসল বিমায় ক্ষতিপূরণ ১ টাকা! নিজের গড় মধ্যপ্রদেশেই বঞ্চনা! ক্ষুব্ধ কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ
বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’য় প্রচারের ঢক্কানিনাদই সার! মধ্যপ্রদেশে মারাত্মক কাণ্ড। মহারাষ্ট্রেও মুখ লুকোনোর জায়গা নেই নরেন্দ্র মোদির। কারণ, তাঁর সাধের এই ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’য় ক্ষতিপূরণ চেয়ে কৃষকদের একাংশ পেয়েছেন মাত্র ১ টাকা। কেউ বা তিন, পাঁচ টাকা। ক্ষতি দেখানো হয়েছে ‘জিরো’, নয়তো ০.০০৪৮০৬ শতাংশ। শুনতে গল্প মনে হলেও, খোদ ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে এটা এখন ঘোর বাস্তব। স্বয়ং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নিজের এলাকা, মধ্যপ্রদেশের সিহোর জেলার কৃষকদের একাংশই মোদি সরকারের বিমা যোজনায় ফসলের ক্ষতিপূরণের ‘ক্লেম’ চেয়ে পেয়েছেন এক থেকে তিন টাকা। কেউ বড়জোর ২১ টাকা। ফলে প্রবল অস্বস্তিতে কৃষিমন্ত্রক। আর এই ঘটনা জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিবরাজও। দিল্লির কৃষিভবনে ১০টি বিমা কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে তিনি প্রবল ভর্ৎসনা করেছেন বলেই মন্ত্রকের বিশেষ সূত্রে খবর। এমনকি কোনও রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, ‘এটা তো প্রহসন! এ আমি চলতে দেব না। কীসের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ ঠিক করা হয়েছে?’
বৈঠকে মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের ভুক্তভোগী কৃষকদেরও অনলাইনে যুক্ত করেছিলেন মন্ত্রী। সরাসরি তাঁদের মুখ থেকেই অভিযোগ শোনানো হয় বিমা কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিদের। কৃষিমন্ত্রীর ধমক খেয়ে তখন আমতা আমতা করা ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায় ছিল না। ‘রাজ্য সময়মতো প্রিমিয়াম দেয় না’ জাতীয় মন্তব্য করে কেউ কেউ রাজ্যের ঘাড়ে ‘দোষ’ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু শিবরাজ স্পষ্ট বলেন, ‘মন্ত্রকের আধিকারিক আর কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় করবে। তার জন্য কৃষকদের কেন ভুগতে হবে? কেন তারা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাবে না? এভাবে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেব না। কৃষকদেরও বিভ্রান্ত হতে দেব না।’ একইসঙ্গে বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ ধরনের তামাশা বরদাস্ত করবে না সরকার। ঘটনার তদন্ত হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের নিয়ম পরিবর্তন করে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করতে হবে।
২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঝড়, অতিবৃষ্টি, খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্যের ক্ষতি হলে, এমনকী সঠিক চাষাবাদ না হলেও মেলে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার সুবিধা। ব্যাঙ্ক থেকে কৃষিঋণ নেওয়া কৃষক তো বটেই, ঋণ না নেওয়া কৃষকও বিমা করতে পারেন। প্রিমিয়াম দিতে হয় সামান্যই। খরিফ ফসলের জন্য ২ শতাংশ। রবি ফসলের জন্য দেড় শতাংশ। বাকিটা দেয় কেন্দ্র-রাজ্য। সময়মতো ক্ষতিপূরণ না দিলে ১২ শতাংশ ‘পেনাল্টি’ হয় বিমা কোম্পানিগুলোর। এমনকি এই যোজনায় ‘ক্লেম’ চেয়েও ক্ষতিপূরণ পেতে দেরির অভিযোগ উঠেছে বারবার। মন্ত্রকের তথ্য মোতাবেক, ৬ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা এখনও ‘পেন্ডিং।’ এর মধ্যে কৃষিমন্ত্রীর রাজ্য মধ্যপ্রদেশেই পড়ে রয়েছে ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। ডাবল ইঞ্জিন মহারাষ্ট্রে ৩৩৪ কোটি, উত্তরপ্রদেশে ১২১ কোটি, রাজস্থানে ১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, ছত্তিশগড়ে ১৩৭ কোটি। এনডিএ শাসিত অন্ধপ্রদেশে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা ‘পেন্ডিং’।
ইল্ড এস্টিমেশন সিস্টেম বেসড অন টেকনোলজি (ইয়েস টেকনোলজি), ওয়েদার ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ডেটা সিস্টেমের (উইন্ড) মতো গালভরা এবং চটকদার নাম জড়িয়ে রয়েছে এই প্রকল্পে। এই পদ্ধতিতে ক্ষয়ক্ষতি মাপার ব্যবস্থাও রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায়। কিন্তু আদতে ক্ষতিপূরণ মিলছে কত? এক টাকা!