• নীলবাতি গাড়িতে অপহরণ, খুনে অভিযুক্ত বিডিও
    বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর, শিলিগুড়ি, সংবাদদাতা, বেলদা ও রাজগঞ্জ: সল্টলেকে নীলবাতি লাগানো গাড়িতে করে অপহরণ। তারপর নিউটাউনের নির্জন এলাকায় গিয়ে খুন করে দেহ লোপাট! নৃশংস এই ঘটনায় জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মনের বিরুদ্ধেই উঠল অপহরণ ও খুনের অভিযোগ। মৃতের নাম স্বপন কামিল্যা (৪৩)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থানার বিলমাধিয়া গ্রামে। তাঁকে অপহরণ করে খুন করেছেন প্রশান্ত বর্মন—এই মর্মে সল্টলেকে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। বিডিও’র কঠোর শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। যদিও প্রশান্ত প্রভাবশালী হওয়ায়, তাঁদের উপর আঘাত নেমে আসতে পারে আশঙ্কা করছেন পরিবারের সদস্যরা। ফলে প্রত্যেকে ভয়ও পাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত বিডিও’কে একাধিকবার ফোন করে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের উত্তরও দেননি তিনি।

    পুলিশ ও পরিবার সূত্রে খবর, সল্টলেক দত্তবাদে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সোনা-রুপোর দোকান চালাতেন স্বপনবাবু। চলতি বছর গণেশ পুজোর সময় তিনি ওড়িশার বালেশ্বরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সময়ই নাকি তাঁর খোঁজে দু’টি গাড়ি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাড়িতে এসে হাজির হন রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন। তিনি দাবি করেন, বাড়ি থেকে সোনা চুরি গিয়েছিল। সেই চোরাই সোনা স্বপনবাবুর দোকানে বিক্রি হয়েছে। বিডিও’র গাড়িতে ছিলেন সল্টলেকের বাড়ির মালিকও। দোকানে এসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় স্বপনবাবুকে। সেই মতো গত ২৮ অক্টোবর তিনি সল্টলেকের দোকানে যান।

    পরিবারের অভিযোগ, সেদিন নীলবাতি লাগানো গাড়িতে করে এসে স্বপনকে তুলে নিয়ে চলে যান বিডিও প্রশান্ত। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি ওই ব্যবসায়ীর। গত ২৯ অক্টোবর নিউটাউনে যাত্রাগাছির একটি নির্জন এলাকা থেকে এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। পরে পরিবার এসে শনাক্ত করার পর জানা যায়, তিনিই স্বপন কামিল্যা। গত ৩১ অক্টোবর বিধাননগর দক্ষিণ থানায় বিডিও’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্বপনবাবুর শ্যালক। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস উক্ত প্রশান্ত বর্মন ও অন্যান্যরা আমার বোনের বরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে খুন করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গিয়েছে।’ স্বপনবাবুর স্ত্রী মমতা কামিল্যা বলেন, ‘১৫-২০ বছর ধরে স্বামী দোকান করছে। প্রশান্ত বর্মনই আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। আমরা থানায় অভিযোগও করেছি।’

    ২০২৩ সালের শেষে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজগঞ্জের বিডিও পদে যোগ দেন প্রশান্ত। তিনি আলিপুরদুয়ারের কালচিনির বাসিন্দা। চলতি বছর ১৪ জুন তাঁকে কালিম্পংয়ে বদলি করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। কয়েকদিন আগে প্রশান্তবাবুকে উত্তর দিনাজপুর জেলায় বদলি করা হয়। আশ্চর্যজনকভাবে সেই বদলির নির্দেশও কয়েকদিনের মধ্যে বাতিল হয়ে যায়। রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। প্রশাসনই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)