নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে টানা চার কিলোমিটার হেঁটে গেলেন তিনি। রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো। তাঁর পথে শামিল হল লক্ষ জনতা। কে নেই মানুষের সেই স্রোতে! কাঁসর, ডঙ্কা, নিশান নিয়ে হাঁটছেন কয়েক হাজার মতুয়া। হাঁটছেন এসআইআর আতঙ্কে গত কয়েকদিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মঘাতী সাতজনের পরিবারের সদস্যরা। আর অসংখ্য তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। বাংলায় এসআইআর ঘোষণার পর মঙ্গলবারই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি। সেখান থেকে আরও একবার এসআইআর-কে চক্রান্ত আখ্যা দিয়ে আপামর মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার শপথ নিলেন মমতা। খোলা মঞ্চ থেকে তাঁর সরাসরি অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বাংলার ২ কোটি ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অভয়বার্তা, ‘কোনও চিন্তা করবেন না। লড়াই করে আমাদের অধিকার আদায় করে নেব।’
এদিন সকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি ইনিউমারেশন ফর্ম বিলি শুরু করেছেন নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও)। তার কয়েক ঘণ্টা বাদে এসআইআর নিয়ে প্রশ্ন তুলে পথে নামেন বাংলার অগ্নিকন্যা। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘বাংলা বিরোধী বিজেপি অধীনস্ত কেন্দ্রের সরকারের এসআইআর চক্রান্তের বিরুদ্ধে মহামিছিল ও প্রতিবাদ সভা।’ সুদীর্ঘ মিছিল-পথের দু’ধারে দাঁড়ানো হাজার হাজার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে দু’হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছেন। আম জনতার এই সমর্থনকে পুঁজি করে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর সপ্তমে নিয়ে যান তৃণমূল সুপ্রিমো। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যেন তেন প্রকারে ২ কোটি লোকের নাম বাদ দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া, দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া বা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে।’ নিজের বক্তব্যের সপক্ষে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতা সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে বিজেপির তাবড় নেতাদের বিভিন্ন হুমকির কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘একজন প্রকৃত ভোটারের নাম কাটা হলে বিজেপি সরকারের শেষ দেখিয়ে দেব। আমার ভোট, আমার অধিকার। জান দেব, তবু মান দেব না। বিজেপিকে উপড়ে ফেলব।’
এদিন তিনি নাম না করে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে ‘কুর্সি বাবু’ বলে কটাক্ষ ছুড়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ভোটার তালিকাতেই ভোট হয়েছে। এখন বাংলায় জিততে পারবে না বলে বিজেপি ঘোঁট পাঁকাতে চাইছে। আগামী বছর অসমে বিধানসভা ভোট। সেখানে কেন এসআইআর হল না? বিধানসভা নির্বাচনের পরে কেন বাংলায় এসআইআর করা গেল না?’ নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, নির্বাচন কমিশনকে এক আসনে বসিয়ে মমতার তোপ, ‘আমি সাত বারের সাংসদ, তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী, চার বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এখন আমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে? স্বাধীনতার এত বছর পর আজ প্রমাণ দিতে হবে ভারতীয় কি না?’