• শুরুতেই আতঙ্কের সঙ্গী বিভ্রান্তি, প্রথম দিনে ৩০ লক্ষ ফর্ম বিলি রাজ্যে, ‘বিএলও ফিরে গেলে কী হবে’, উৎকণ্ঠায় ভোটাররা
    বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শম্বুকগতিতে শুরু হওয়া ফর্ম বিলি। বিএলওর পরিচয়পত্র নিয়ে সংশয়। হাতাহাতির উপক্রম। রাজনৈতিক টানাপোড়েন। এবং আতঙ্ক। বাংলায় পুরোদস্তুর শুরু হয়ে গেল এসআইআর বা ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিশন। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন? সকাল থেকে রাজ্যের আনাচে কানাচে নানাবিধ প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তি। এতদিন আতঙ্ক ছিল, নাম বাদ চলে গেলে কী হবে? মঙ্গলবার সকালে দেখা গেল বাড়তি সংযোজন—বিভ্রান্তি। একগুচ্ছ প্রশ্নঘেরা বিভ্রান্তি। যেমন, ১) ‘বিএলও কবে আমার বাড়ি যাবে? তখন যদি বাড়িতে না থাকি, তাহলে কী হবে?’ ২) ‘আমার ঠিকানা বদলেছে, কিন্তু ভোটার কার্ড আপডেট করা হয়নি। পুরোনো ঠিকানায় বিএলও গিয়ে ফিরে এলে কী হবে?’ ৩) ‘বিএলওর পরিচয়পত্র দেখার সঙ্গে সঙ্গে কি তাঁর ছবিও তুলে রাখতে হবে?’ দিনভর এইসব জিজ্ঞাস্যই ঘোরাফেরা করল সাধারণ মানুষের মনে। তার উপর দিনের শুরুটা নির্বাচন কমিশন রীতিমতো ধীর গতিতে করায় বাড়তে শুরু করল উৎকণ্ঠা। পাশের বাড়িতে বিএলও চলে এল, আমার ফ্ল্যাটে এল না তো? দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার লক্ষ ফর্ম বিলি হওয়ায় যে চাপানউতোর দিকে দিকে তৈরি হয়েছিল, তা খানিক কাটল বিকেল গড়াতে। প্রথম দিনের শেষে বাংলায় ৩০ লক্ষ ইনিউমারেশন ফর্ম বিলি করল কমিশন। এর মধ্যেই অবশ্য ঘটনার ঘনঘটা। গাইঘাটার চণ্ডীগড় স্পেশাল ক্যাডার এফপি বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। আর এই স্কুলের তিনজন শিক্ষককেই বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করেছে কমিশন। সেই ক্ষোভে মঙ্গলবার তিন শিক্ষককেই দু’ঘণ্টার উপর অফিসঘরে তালাবন্ধ করে রেখে দেন অভিভাবকরা। এদিনই অন্য স্কুল থেকে একজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছিল। আটক করা হয় তাঁকেও। পরে গাইঘাটার জয়েন্ট বিডিও ও পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। আবার হাওড়ায় ঘটল পরিচয়পত্র বিভ্রাট। দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভার ২৪ নম্বর বুথের বিএলও বাগনানের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা অনুপমা দাস। পরিচয়পত্র দেখাতে না পারায় উনসানি গরপা এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে আটকে দেন। অশান্তি গড়ায় জগাছা থানা পর্যন্ত। এর পাশাপাশি কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে দিনভর প্রশ্ন তো ছিলই। কারণ, আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু জায়গায় বিএলওরা রাত পর্যন্ত কিট পাননি বলে দাবি। আবার দুর্গাপুরে কয়েকটি এলাকার বিএলওরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কাজ করবেন না। তাঁদের জায়গায় অন্য নাম দেওয়া হয়। যোগাযোগ করলে তাঁরা আবার জানান, এখনও অর্ডার পাইনি। ফলে এ নিয়ে চলে দীর্ঘ টানাপোড়েন। তার উপর শাসক-বিরোধী সব দলের অভিযোগ, বিএলএ-২’দের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি। এমনকি, ২০০২ ও চলতি বছরের ভোটার তালিকার ফোটোকপিও মেলেনি। ৬৩ হাজার ৯৪০ জনের নাম বিএলএ-২ হিসেবে জমা দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি। আরও একবার ওই পদে নিয়োগের জন্য দলগুলিকে আর্জি জানানো হয়েছে। তবে এসবের মধ্যেও ফর্ম বিলি চলেছে। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফর্ম বিতরণ ও জমা নেওয়ার সময়সীমা থাকলেও, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর টার্গেট বেঁধেছে—সাতদিনের মধ্যে বিলির কাজ শেষ করতে হবে। অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অরিন্দম নিয়োগী জানিয়েছেন, ‘আজ প্রথমদিন বলে শুরুটা খানিক ধীর ছিল। কিন্তু আমরা মাইক্রো লেভেলে হিসেব কষছি। এক একটি বুথে গড়ে ৯০০ ফর্ম দিতে হবে। সেই নিরিখে এক একজন বিএলও আগামী ৭ দিনে নিশ্চয়ই কাজ শেষ করতে পারবেন।’ 

    ইতিমধ্যেই এসআইআর নিয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছে কমিশন। দিল্লির সদর দপ্তরে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। নম্বর—০১১-২৩০৫২০০২ এবং ০১১-২৩০৫২১১০। কিন্তু এতকিছুর পরও কি আম জনতার উৎকণ্ঠা বা আতঙ্ক কাটছে? এই মুহূর্তে নয়। সাধারণ ভোটার তো বটেই, বিএলওরাও ধন্দে। কারণ, তাঁরা এই গোটা পর্বে ‘অন ডিউটি’ থাকবেন কি না, সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট বার্তা কমিশন থেকে আসেনি। সিইও দপ্তর থেকে যদিও প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, এক মাস বিএলওদের পূর্ণ সময়ের জন্য কাজে লাগাবেন জেলার ডিইও এবং ইআরও’রা। ফলে ধন্দের সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভও। এর মধ্যে আজ উত্তরবঙ্গে আসছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দল। যোগ দিচ্ছেন সিইও মনোজ আগরওয়ালও।
  • Link to this news (বর্তমান)