• ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া হয়ে উঠতে চলেছে শিল্পনগরী, সুখনিবাসা ও ঘাগরাশোলে শিল্পস্থাপনে জমি দিল রাজ্য
    বর্তমান | ০৫ নভেম্বর ২০২৫
  • প্রদীপ্ত দত্ত, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রাম বাংলার শিল্প মানচিত্রে জায়গা করে নিতে চলেছে। ঝাড়গ্রাম ব্লকের সুখনিবাসা ও ঘাগরাশোলে সিমেন্ট ও স্টিল প্রস্তুতকারক দু’টি শিল্প সংস্থাকে ফ্রি হোল্ডে জমি দেওয়া হয়েছে। সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর এই কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের স্বাধীন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে জেলার বহু যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। বড় শিল্পের সঙ্গেই প্রসার ঘটবে অনুসারী শিল্পেরও।
    ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, জঙ্গলমহলের উপর সবসময় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নজর থাকে। রাজ্য সরকার এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি অগ্ৰাধিকার দিচ্ছে। সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

    পর্যটন শিল্পের হাত ধরে ঝাড়গ্রাম জেলার আর্থিক বিকাশ ঘটছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এবার জেলায় শিল্প প্রস্তুতকারক সংস্থার বিনিয়োগ হতে চলেছে। ওই দু’টি সংস্থাকে ১৪৯.৬৪ হেক্টর জমি ফ্রি হোল্ডে দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রামে শিল্প বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে রাজ্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। জমি দেওয়া সেই উদ্যোগের প্রথম ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে। জমিটি এতদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের অধীনে ছিল। জমি দু’টি শিল্পসংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সংস্থা দু’টি বেশ কিছুদিন আগে জমির জন্য আবেদন করেছিল। ঝাড়গ্রাম জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর দু’মাস আগেই বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ঝাড়গ্রাম ব্লকের সরডিহা এলাকায় ঘাগরাশোল ও দুধকুণ্ডি গ্ৰাম পঞ্চায়েতে সুখনিবাসা মৌজা রয়েছে। পাশাপাশি থাকা দু’টি মৌজার পাশেই সরডিহা রেলস্টেশন ও ৯নম্বর রাজ্য সড়ক রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার পূর্বদিকে খড়্গপুর, পশ্চিমে টাটানগর ও রৌরকেল্লা শিল্পনগরী। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলায় রাজনৈতিক শান্তি ফিরে আসে। পর্যটনশিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করে। এরপর থেকেই বড় শিল্প সংস্থাগুলি জেলায় বিনিয়োগে আগ্ৰহ দেখাতে শুরু করে। মানিকপাড়া এলাকায় আগেও শিল্প স্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা সহ নানা কারণে তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগ জেলায় বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ব্লকের রাজাবাঁধের বাসিন্দা বুদ্ধেশ্বর মাহাত বলেন, এই এলাকার কিছু জায়গায় এক ফসলি চাষ হয়। বেশিরভাগ জমিই পাথুরে। তীব্র জলসংকট রয়েছে। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে ও খড়্গপুরে চলে যায়। এলাকায় শিল্প হলে জেলার বিপুল সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। বড় শিল্প সংস্থা এই এলাকায় বিনিয়োগ করবে জেনে আশায় বুক বাঁধছি।

    মানিকপাড়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান মহাশিস মাহাত বলেন, এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল। চাষবাস খুব বেশি হয় না। শিল্প হলে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। বহু মানুষ কাজ পাবে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান থাকাকালীন সরডিহা রেলস্টেশনে ‘রেক’ তৈরি নিয়ে আলোচনা শুনেছিলাম। যদিও পরে সেই নিয়ে আর কিছু শুনিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার মানুষের জন্য ভাবেন। তাঁর এই উদ্যোগ জেলায় বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। ঝাড়গ্রাম জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক(এলআর) লক্ষ্মণ পেরুমল আর বলেন, দু’মাস আগেই রাজ্য প্রশাসন বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেয়। জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
  • Link to this news (বর্তমান)