নিজস্ব প্রতিনিধি, পাটনা: নয়ের দশকের গোড়ায় বিজেপির কমণ্ডল রাজনীতির মোকাবিলায় অভিভক্ত জনতা দলের মণ্ডল রাজনীতির সূচনা। সেই পর্ব থেকেই বিহারের রাজনীতি অগ্রসর (সবর্ণ) এবং অনগ্রসরে (পিছড়ে) দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। লালকৃষ্ণ আদবানির রামরথ রুখে দিয়ে বিহারে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক নিশ্চিত করে নিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। পরের দেড় দশক এই মুসলিম-যাদব (এম-ওয়াই) সমীকরণকে হাতিয়ার করে তিনি মগধভূমি শাসন করেছেন। কিন্তু বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৫ সালে পাটনার কুর্সি দখলের পরে কুর্মি নেতা নীতীশ কুমার দ্রুত লালুর মোকাবিলায় নতুন সমীকরণে মন দেন। আর জাতপাতের অঙ্ক কষেই। সেই থেকে সাফল্য। ওবিসিদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে নীতীশ কুশওয়া ও কুর্মিদের (যারা লব-কুশ নামে পরিচিত) ভোটের দখল নিয়েছেন। অন্যদিকে, তাঁর জোটসঙ্গী বিজেপির ভরসা উচ্চবর্ণ। এবারও সেই সমীকরণে আসন বণ্টন হয়েছে এনডিএ শিবিরে।
এবার ১০১টি করে আসনে লড়ছে বিজেপি এবং জেডিইউ। এই ২০২টি আসনের মধ্যে মোট ৭১টি আসনে উচ্চবর্ণ এবং ৬৩ কেন্দ্রে ওবিসি সম্প্রদায়ের প্রার্থী দিয়েছে এনডিএ। অর্থাৎ এবারও উচ্চবর্ণ এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় (পড়ুন কোর ভোট ব্যাংক) ধরে রাখাই লক্ষ্য এনডিএর। বাকি আসন নিখুঁতভাবে ভাগ হয়েছে অতি পিছড়ে বা ইবিসি, তপশিলি জাতি এবং উপজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে। তবে হ্যাঁ, এবার বিজেপির কোনও মুসলিম প্রার্থী নেই। জেডিইউর মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র চার। কারণ বিজেপি বুঝে গিয়েছে, এসআইআরের পর হাওয়া যেদিকে বইছে, তাতে মুসলিম প্রভাবিত কেন্দ্রে খুব একটা দাঁত ফোটানো যাবে না। তাই ওদিকে জোর না দিলেও চলবে। এমনকি, এনডিএর বাকি শরিক এলজেপি, হাম,আরএলএম’ও জাতপাতের নিরিখেই প্রার্থী খাড়া করেছে বাকি ৪১টি আসনে। আর বিরোধী মহাজোট? ২৪৩টি আসনের মধ্যে বড় শরিক আরজেডি লড়ছে ১৪৩টি আসনে, কংগ্রেস ৬০, বাকি আসন বাম দল (সিপিআই-এমএল, সিপিআই, সিপিএম) ও বাকি শরিকরা মিলে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সর্বত্রই জাতপাতের ছায়া। ওবিসি গোষ্ঠীর যাদব এবং মুসলিম ভোট ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল মহাগঠবন্ধনে স্বাভাবিকভাবেই এই দুই গোষ্ঠীর প্রার্থী সংখ্যার আধিক্য। বিহারে যারা মুসলিম, কোয়েরি বা ‘এমওয়াইকে’ নামে পরিচিত। মহাজোটে ১০৪ জন ওবিসি প্রার্থী, যার মধ্যে সিংহভাগই যাদব গোষ্ঠীর। এরপরই উচ্চবর্ণের ৪০, অতি পিছড়ে (ইবিসি) ১৫, তপশিলি জাতি এবং উপজাতি গোষ্ঠীর ১৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবং বিরোধী শিবিরে মুসলিম প্রার্থী সংখ্যা ৩১। অর্থাৎ, বিহারে কাঁটে কা টক্কর। শুধু এবার বলে নয়। যতদিন জাতপাত থাকবে। ততদিনই।