সিওয়ান। বিহারের বাহুবলীদের ইতিহাসে সর্বকালের কুখ্যাত ডন সাহাবুদ্দিনের গড়। বয়স্কদের কথায়, ‘সাহাবুদ্দিনের অনুমতি ছাড়া সিওয়ানে এক সময় হাওয়াও বইত না।’
মাত্র ১৯ বছর বয়সে অপরাধের হাতেখড়ি। ২৩ বছরে বয়সে রাজনীতিতে। তোলার টাকা না পেয়ে দুই ভাইকে জ্যান্ত অ্যাসিডে চুবিয়ে হত্যা। জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি চন্দ্রশেখর প্রসাদকে প্রকাশ্যে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের উপর গ্রেনেড, একে ৪৭ নিয়ে হামলা। কী নেই সাহাবুদ্দিনের অপরাধের তালিকায়। খুন, অপহরণ, তোলাবাজি তো মামুলি ব্যাপার। উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল সাহাবুদ্দিনের অপরাধের জাল।
সিওয়ানের তিন বারের সাংসদ সাহাবুদ্দিন আর বেঁচে নেই। ২০২১ সালে জেলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও বিহারের সর্বত্র যেন সাহাবুদ্দিনের ছায়া। কারণ? এবার সিওয়ান জেলার রঘুনাথপুর আসনে সাহাবুদ্দিনের ছেলে ওসামা সাহাবকে প্রার্থী করেছে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি। এহেন সুযোগ হাতছাড়া করেননি নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথরা। মৃত সাহাবুদ্দিনকে ‘জঙ্গলরাজ’ ফেরানোর মুখ করে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি।
নয়ের দশকে সাংসদ হওয়ার পর লালুর প্রশ্রয়ে সিওয়ানে সমান্তরাল প্রশাসন চালাত সাহাবুদ্দিন। ‘উনকা অলগ আদালত থা। ডক্টর কি ফিজ ভি উয়ো হি ঠিক করতা থা।’ বলছিলেন বছর পঁয়ষট্টির লাছুয়া রাম। কিন্তু ওসামা? প্রশ্ন করতেই চুল কাটা থামিয়ে লখন বলেন, ‘উনকা বাপ সাহাবুদ্দিন কাম ভি তো কিয়া না? সিওয়ান মে মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কৌন কিয়া? সাহাবুদ্দিন। আভি সরকার বদল না হ্যায়। যুবা কো কাম চাহিয়ে।’ লখনের কথায় সায় দেয় বছর ২৫-এর যুবক মুন্না। যদিও ওসামার লড়াই সহজ নয়। তাঁকে প্রার্থী করে আসলে সাহাবুদ্দিনের নামে জুয়া খেলেছে আরজেডি। রঘুনাথপুর মূলত যাদব, মুসলিম, অতি অনগ্রসর (ইবিসি) আর দলিত বহুল। ২০২০-র ভোটে পৃথকভাবে লড়েছিল এনডিএ এবং চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (রামবিলাস)। ভোট ভাগাভাগিতে সেবার জিতে যান আরজেডির হরিশঙ্কর যাদব। এবার এনডিএ শিবিরে এলজেপি। তাই সাহাবুদ্দিন-পুত্রর সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
তবুও সাহাবুদ্দিন নামে বাজি ধরে শুধু রঘুনাথপুর নয়, গোটা সিওয়ানেই প্রভাব বজায় রাখতে চাইছে আরজেডি। সিওয়ানে এবার মহাগঠবন্ধনের গড় ধরে রাখার লড়াই। জেলার মোট আট আসনের মধ্যে ৬টি মহাগঠবন্ধনের দখলে। রঘুনাথপুর তো বটেই, এবার সিওয়ান বিধানসভা আসনেই হাই প্রোফাইল ফাইট। এখানে বিজেপি প্রার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডে। তাঁর টক্কর বর্তমান আরজেডি বিধায়ক অবধ বিহারি চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
লখনের দোকানের উলটো দিকে শান বাঁধানো বটতলায় তাস খেলছিলেন ষাটোর্ধ্ব হৃদয় শঙ্কর দুবে। বললেন, সেই দিন আর দেখতে চাই না। রাস্তা, বিদ্যুৎ সব হয়েছে। শান্তি ফিরেছে বিহারে। ‘অউর কেয়া চাহিয়ে সরকার সে?’ তাঁর মুখের কথা কেড়ে দারোগা প্যাটেল বলে ওঠেন, ‘আপ সাহাবুদ্দিন কা জামানা দেখে নেহি। যাদব লোগ ভি আভি আরজেডি কো ভোট নেহি করতে।’
সাহাবুদ্দিন আর নেই। সময় অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তবু বয়স্কদের গল্পকথা, তরুণদের আকাঙ্খা-এমন সবকিছুর মধ্যেই যেন মিশে রয়েছে সাহাবুদ্দিনের ‘জমানা’। তাই তাঁর ছায়া শুধু সিওয়ানেই সীমাবন্ধ নয়। তা যেন ঘুরে বেড়ায় গোটা বিহারেরই আনাচে কানাচে।