আজ, বৃহস্পতিবার বিহার মহারণের প্রথম দফা। ১৮টি জেলার ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট। এবং এযাবৎকালের সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ? প্রথমত, জাতি গণনার পর বিহারে প্রথম নির্বাচন। দ্বিতীয়ত, এসআইআর। তৃতীয়ত, এই প্রথম ত্রিমুখী লড়াই—এনডিএ, মহাগঠবন্ধন ও প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি। ফলে এবারের ভোট যাকে বলে ‘হাইভোল্টেজ স্পার্ক’। আজ ৪৫,৩৪১টি ভোটকেন্দ্রে মোট ১,৩১৪ জন প্রার্থী। ভোটার সংখ্যা, ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ। আর এই দফাতেই মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদব থেকে শুরু করে বিজেপির উপ মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় কুমার সিনহা, জেডিইউ সভাপতি উমেশ কুশওয়া, ভোজপুরি অভিনেতা কেশরীলাল যাদব, লোকসংগীত শিল্পী মৈথিলী ঠাকুর, লালু-পুত্র তেজপ্রতাপ যাদবের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভাগ্য পরীক্ষা। পাশাপাশি রয়েছেন শিরোনামে উঠে আসা জেলবন্দি বাহুবলী অনন্ত সিং এবং সাহাবুদ্দিন-পুত্র ওসামাও। তাই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার আয়োজন সেরে ফেলেছে নির্বাচন কমিশন। রাঘোপুর থেকে হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে নামছেন তেজস্বী। এখানে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সতীশ কুমার। আর এক প্রার্থীও কিন্তু নিঃশব্দে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রয়েছেন—প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি। আর শুধু রাঘোপুর নয়, বিহারের সমগ্র ভোটেই তিনি এনডিএ এবং ইন্ডিয়াকে বেগ দেবেন বলে দাবি করে রেখেছেন পিকে। তাঁর অস্ত্র এবং আশা? শিক্ষিত ও যুব সমাজ। প্রথম দফাতেই ১৮-১৯ বছর বয়সি ভোটার সংখ্যা ৭ লক্ষ ৩৮ হাজার।
২০২০’র ফলের নিরিখে প্রথম দফার ১২১টি আসনের মধ্যে ৬১টিতে জয় পেয়েছিল বিরোধী মহাজোট। এনডিএর ঝুলিতে গিয়েছিল ৫৯টি আসন। কিন্তু এবার? এসআইআরের পরও প্রথম দফার যা হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, তাতে চেনা ছক উপেক্ষা করা কঠিন। ইস্তাহার ও প্রচারে দু’তরফই সরকারি চাকরি, জল, বিদ্যুৎ, মহিলাদের টাকা সহ একাধিক আশ্বাস দেওয়ার পরও। কারণ? চিরাচরিত জাতপাতের অঙ্ক। ২০২৩ সালের জাত গণনা অনুযায়ী, বিহারের মোট জনসংখ্যা ১৩.৭ কোটি। তার মধ্যে ওবিসি (কুশওয়া, কুর্মি, যাদব) ২৭.১ শতাংশ, উচ্চবর্ণ (রাজপুত, ভূমিহার, ব্রাহ্মণ) ১৫.৫২ শতাংশ, অতি পিছড়ে বা ইবিসি (ধানুক, মাল্লা, তেলি, কানু, হালওয়াইদের মতো গোষ্ঠী) ৩৬.০১ শতাংশ, তপশিলি জাতিভুক্ত (দলিত ও মহা দলিত অর্থাৎ পাসোয়ান, চামার, মুসাহার-সহ ২৩টি গোষ্ঠী) ১৯.৬৫ শতাংশ। এছাড়াও তপশিলি উপজাতি ভুক্ত সম্প্রদায়ের ১.৬৮ শতাংশ মানুষ এ রাজ্যে রয়েছেন। এছাড়াও বিহারের ১৭ শতাংশের মুসলিম জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ওবিসি, ইবিসি এবং অন্য সম্প্রদায়ভুক্ত। এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দল এবং ভোট ব্যাংকের সমীকরণ নির্দিষ্ট। অর্থাৎ, জেডিইউ হোক, আরজেডি বা বিজেপি—নিজস্ব গড়ে নিজেরাই রাজা। অন্য পার্টি খুব একটা ফাটল ধরাতে পারছে না। কারণ? ওই... জাতপাত! মোক্ষম প্রশ্নটি অবশ্য অন্য—এসআইআর আজ কতটা প্রভাব ফেলবে। কারণ, প্রথম দফায় বেশিরভাগ ভোটই গ্রামীণ এলাকায়। আর বিহার এসআইআরে কত নাম বাদ গিয়েছে? ৬৮ লক্ষ।