• হরিয়ানায় ভোটচুরি, বোমা রাহুলের, ২৫ লক্ষ ভোটে কারচুপি! ভোটার তালিকায় ২২টি বিভিন্ন নামে ব্রাজিলের মডেল
    বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘এইচ’ ফর হাইড্রোজেন। ‘এইচ’ ফর হরিয়ানা। আজ বিহারে ভোট শুরু। তার ২৪ ঘণ্টা আগে চব্বিশে হেরে যাওয়া হরিয়ানা ভোটের সমীকরণে বোমা ফাটালেন রাহুল গান্ধী। বললেন, ‘হরিয়ানায় হয়েছে। এবার বিহারেও হবে। ভোটচুরির সরকার। মাত্র আটটা আসনের জন্য কংগ্রেস সরকার গড়তে পারেনি। হরিয়ানায় ২ কোটি ভোটারের ২৫ লক্ষই ভুয়ো। প্রতি আটটিতে একটি ভোট চুরি হয়েছে। একটি আসনে কংগ্রেস হেরেছে মাত্র ৩২ ভোটে। চুরি না হলে সম্ভব?’

    ৯০ আসনের হরিয়ানায় এক্সিট পোলে প্রায় প্রত্যেক সমীক্ষক সংস্থাই এগিয়ে রেখেছিল কংগ্রেসকে। কিন্তু ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল উলটপুরাণ। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৭টি, বিজেপি ৪৮। এই প্রসঙ্গ টেনেই রাহুল কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে। ছাড় পাননি প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশন রাজীব কুমারও। রাহুলের সাফ কথা, ‘নির্বাচন কমিশন ও মোদি-শাহের আঁতাতেই মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানার মতো একের পরের পর রাজ্য জিতছে বিজেপি। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ভারতের গণতন্ত্র। ভোটারদের সমর্থনে নয়, সিস্টেমের বাঁকাপথেই জিতছে বিজেপি।’ কেন এই অভিযোগ রাহুলের? ভিত্তিই বা কী? লোকসভার বিরোধী দলনেতার সপাট জবাব, ‘নির্বাচন কমিশনের থেকে পাওয়া তথ্য। নিজেদের মনগড়া কিছু নয়।’

    কোটলা মার্গে দলের নতুন সদর দপ্তর ইন্দিরা ভবনের প্রেক্ষাগৃহের বড় পর্দায় রাহুল গান্ধী ফুটিয়ে তুললেন একের পর স্লাইড। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনির এক ভিডিয়ো বক্তব্য দেখানো হল। সেখানে তাঁকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ভোটে জেতার যাবতীয় ব্যবস্থা আমাদের করা আছে।’ সেই ‘ব্যবস্থা’ই আসলে বোমার বারুদ। বিস্ফোরণ শুরু হল রাহুলের। এক যুবতী ভোটারের ছবি প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। সীমা, সুইটি, সরস্বতী। ওই মহিলারই একাধিক সচিত্র পরিচয়পত্র পর্দায় তুলে ধরলেন তিনি। দাবি করলেন, কমিশনের থেকে পাওয়া ভোটার তালিকাতেই মিলেছে এই তথ্য। রাই বিধানসভা কেন্দ্রের ১০টি বুথের ২২ জায়গায় একই মহিলার ছবিতে ভোটার কার্ড। আর চমক? ভোটার কার্ডের ছবির মহিলা হরিয়ানভি তো দূরঅস্ত, ভারতীয়ই নন। তিনি ব্রাজিলিয়ান মডেল। একইভাবে হরিয়ানার অন্য দু’টি বুথে একই মহিলার ছবি সংবলিত ২২৩টি ভোটার কার্ডও ফাঁস করেছেন রাহুল গান্ধী! তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, কংগ্রেসকে হরিয়ানায় হারাতে ২৫ লক্ষ ভোটের কারচুপি হয়েছে। তার মধ্যে ডুপ্লিকেট ভোটার কার্ড ইস্যু হয়েছে ৫ লক্ষ ২১ হাজার ৬১৯টি। ৯৩ হাজার ১৭৪টির ঠিকানা ভুয়ো। এক চিলতে ঘরের একই ঠিকানায় ৫০০ জন পর্যন্ত ভোটার (বাল্ক ভোটার) মিলেছে ১৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৩৫১ জন। যে আটটি আসনের জন্য কংগ্রেস হেরেছে, সেখানে মোট ভোটের তফাৎ মাত্র ২২ হাজার ৭৭৯। রাহুল দেখিয়ে দিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতাদের নাম রয়েছে হরিয়ানাতেও। আর এইসব কারচুপি আড়াল করতেই নির্বাচন কমিশন বুথের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নষ্ট করেছে। এখানেই শেষ নয়, বিহারে এসআইআরের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণের পর নাম বাদ পড়া কয়েকজনকে এদিন মঞ্চে হাজির করিয়েছেন। 

    যদিও রাহুলের এই বোমাকে ‘বকওয়াস’ বলেই মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বলেছেন, ‘আসলে বিহার হারবে জেনেই রাহুল গান্ধী দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছেন।’ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে। তাদের প্রশ্ন, ভোটার তালিকায় যদি এতই গোলমাল হয়ে থাকে, তাহলে হরিয়ানায় ভোটের সময় কেন অভিযোগ দায়ের হয়নি? কংগ্রেসের বুথ লেভেল এজেন্টরা (বিএলএ) কী করছিলেন? বিহারে এসআইআর পর্বেও কেন একটিও অভিযোগ জানাননি রাহুল গান্ধীর দল? তবে হ্যাঁ, কমিশন কিন্তু একবারও বলল না, রাহুলের দেখানো ভোটার তালিকা মিথ্যা। 
  • Link to this news (বর্তমান)