• ‘ভোটের কাগজ পাচ্ছি না’, প্রধানের সামনে কান্না বৃদ্ধার
    বর্তমান | ০৬ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বুধবার তখন সবে সকাল হয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের প্রধান অনিতা রাউতের বাড়িতে আসেন ষাটোর্ধ্ব আলেয়া খাতুন। প্রধান তখনও ঘুম থেকে ওঠেননি শুনে উদ্বিগ্ন চোখেমুখে রাস্তাতেই পায়চারি করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর প্রধান বাইরে বেরতেই তাঁকে দেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান এলাকার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা। বলেন, আমার ও আমার স্বামীর ভোটের কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছি না। ভোটার কার্ড কোথায় হারিয়ে ফেলেছি, সেটাও জানি না। অনেকেই বলছেন, ভোটের কাগজ না থাকলে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। কী করব বুঝতে পারছি না। উদ্বিগ্ন ওই বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করেন তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত প্রধান। বলেন, ভয়ের কিছু নেই। তৃণমূল পাশে আছে। আমাদের দলের তরফে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। সেখানে যান। আপনার সমস্যার কথা বলুন। নিশ্চয়ই কিছু একটা সুরাহা হবে। 

    পঞ্চায়েত প্রধান আশ্বস্ত করার পরও অবশ্য পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারেননি আলেয়া। বলেন, আমরা ভারতের বাসিন্দা। জলপাইগুড়ির রানিনগর চেওড়াপাড়ায় বাড়ি। এখন ডেঙ্গুয়াঝাড়ে ছেলের কাছে থাকি। আমার ও আমার স্বামী দরিমুদ্দিন মহম্মদের ভোটার কার্ড খুঁজে পাচ্ছি না। বলা হচ্ছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকাতেও নাকি আমার ও আমার স্বামীর নাম নেই। আমাদের পরিবারে ১০ জন লোক। ভোটের কাগজে আমাদের নাম না থাকলে ছেলেমেয়েদের নাম উঠবে কীভাবে? কী যে হবে ভেবে পাচ্ছি না। 

    পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, এসআইআর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই লোকজন আমার বাড়িতে আসছে। যতটা সম্ভব তাদের আশ্বস্ত করছি। বলছি, অযথা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একজনও বৈধ ভোটারের নাম যাতে বাদ না যায়, সেটা দেখছি আমরা। যাদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই, দলের তরফে যে হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে, সেখানে পাঠানো হচ্ছে তাদের। 

    শুধু পাহাড়পুর নয়, জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই এসআইআর নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। এরইমধ্যে ছড়াচ্ছে নানা বিভ্রান্তি। ঠিক যেমন জলপাইগুড়ির বহু জায়গায় মঙ্গলবার বুথ লেভেল অফিসাররা দু’টির বদলে একটি ফর্ম দিয়ে যাওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কেন রিসিভ কপির ফর্ম দেওয়া হচ্ছে না, জানতে চাইলে বিএলও’রা বলেন, একটিই ফর্ম দেওয়া হয়েছে তাঁদের। দ্বিতীয় ফর্মটি তাঁদের হাতে এলে ফের বাড়িতে এসে দিয়ে যাওয়া হবে। বুধবার সকালেও জলপাইগুড়ির পাতকাটা কলোনিতে বিএলও’রা একটি ফর্ম বিলি করেন। কেন দু’টি ফর্ম একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভোটাররা। দুপুরের পর অবশ্য দ্বিতীয় ফর্ম বিলি শুরু হয়। 

    পাতকাটা কলোনির বিএলও রণজিৎ সরকার বলেন, প্রথমে আমাদের হাতে একটিই ফর্ম এসেছিল। সেটাই দেওয়া হয়েছিল। পরে দ্বিতীয় ফর্মটি আসায় এদিন সেটিও বিলি করা হয়েছে।  আলেয়া খাতুন। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)