সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: ৫৬ জোড়া দেব, দেবীর প্রদর্শনীর মাধ্যমে বুধবার বিষ্ণুপুরের দুই মন্দিরে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবের সূচনা হল। মল্লরাজ বীরহাম্বিরের দেখানো পথ ধরে ঐতিহাসিক রাসমঞ্চের অনুকরণে শহরের মাধবগঞ্জ ও কৃষ্ণগঞ্জের দুই মন্দিরে ৫৬ জোড়া দেব,দেবী রাসলীলায় অংশ নেন। তাঁদের কেন্দ্র করে এলাকার বাসিন্দারা উৎসবে মাতোয়ারা হন। পুজোর উদ্যোক্তারাও নিজেদের দেব, দেবীর আরাধনার পাশাপাশি অতিথি দেবদেবীদের খাতির যত্নের কোনও ত্রুটি রাখেন না।
অন্যদিকে, শহরের শাঁখারিবাজারে ঐতিহাসিক মদনমোহন মন্দির প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার থেকে রাস উৎসব শুরু হয়েছে। সেখানে প্রভু মদনমোহন জীউ’র বিগ্রহ ভক্তদের দর্শনের জন্য মন্দিরের দাওয়ায় সাজিয়ে রাখা হয়। সেই উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলছে।
মাধবগঞ্জ মদনগোপালজীউ রাস উৎসব কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম গোস্বামী বলেন, আমাদের মন্দিরের মদনগোপাল জিউ ছাড়াও রামদনগোপাল, মদনমনোহর, মুরলীমোহন, রাধাজীবন, নাড়ুগোপাল, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, রাধাবিনোদ, জগন্নাথ, কালাচাঁদ, রসিকনগর, বেণীমাধব, যুগলকিশোর, মহাপ্রভু প্রভৃতি দেবদেবীকে আনা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধারতি ছাড়াও লোকসঙ্গীত ও বাউল অনুষ্ঠান হবে।
কৃষ্ণগঞ্জ রাধালালজীউ মন্দির কমিটির কর্মকর্তা রবিলোচন দে বলেন, আমাদের মন্দিরে দেবতা রাধালালজিউ, কৃষ্ণলালজিউ ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মন্দির থেকে গোবিন্দজীউ, গৌর নিতাই, দামোদর জিউ, রাধারমন জিউ প্রভৃতি দেবদেবী এসেছেন। পাঁচদিন ধরে মন্দির প্রাঙ্গণে তাঁরা থাকবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভক্তদের জন্য ভোগের ব্যবস্থা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে মল্লরাজ বীরহাম্বির বৈষ্ণবধর্ম নেওয়ার পর তাঁর অনুপ্রেরনায় বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন এলাকায় বহু মন্দির গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে রাজদরবার ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেব, দেবীকে এক জায়গায় এনে ভক্তদের কাছে তা প্রদর্শনের জন্য ঐতিহাসিক রাসমঞ্চ নির্মাণ করেছিলেন। সেই বিষ্ময় কীর্তি আজ হেরিটেজের মর্যাদায় অর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়ার অধীনস্থ। কালের নিয়মে সেই রাজ আমল ঘুচলেও মল্লরাজাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সচেষ্ট শহরের কৃষ্ণগঞ্জ ও মাধবগঞ্জ ষোলোআনা কমিটি। প্রতিবছর দুই মন্দিরের দাওয়ায় ৫৬ জোড়া দেব,দেবীকে সাজানো হয়। এক জায়গায় এত সংখ্যক দেবদেবীর দর্শন পেতে প্রতিবছর ভক্ত ও সাধারণ দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। উৎসব উপলক্ষ্যে মাধবগঞ্জে বসে মেলা। এছাড়াও দুই মন্দির প্রাঙ্গণে পাঁচদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণগঞ্জে রাধালালজীউ মন্দিরে ১৬ জোড়া এবং মাধবগঞ্জ মদনগোপাল জীউ মন্দিরে ৪০ জোড়া দেব, দেবী আসেন। রাজদরবার ও বিষ্ণুপুরের ওয়ার্ডে অবস্থিত মন্দির ছাড়াও দূরদুরান্তের মন্দিরের দেব দেবীকেও রাসলীলায় আনা হয়।