নান্টু হাজরা: স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যা খুনে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি অশোক করের! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হাড়হিম করা খুনের ঘটনায় অন্যতম 'প্রধান চরিত্র' এই অশোক কর কে? বিডিও প্রশান্ত বর্মনের বাড়ির কাজের লোক এই অশোক কর। এই অশোক কর বিডিওর বাড়িতে কাজ করতেন। এই অশোক কর-ই বিডিওর বাড়ি থেকে সোনা চুরি করেন। তারপর সেই চোরাই সোনা বিক্রি করেন স্বপন কামিল্যাকে।
অশোক কর বিডিও প্রশান্ত বর্মনের নিউটাউনের এবি ৬৭ নম্বর বাড়িতে কাজ করতেন। অশোক কর-ই নিউটাউনের বাড়ি থেকে মাস চারেক আগে সোনার গয়না চুরি করেন। সেই গয়না সল্টলেকের লাবণী আইল্যান্ডে স্বপন কামিল্যাকে বিক্রি করে দেন তিনি। কিন্তু সেই সময় অশোক করকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। বলা হয়, সোনা যাচাই করে টাকা দেওয়া হবে। এরপর গণেশ পুজোর দিন সেই সোনার গয়নার খোঁজ পড়ে। গয়নার খোঁজ করেন বিডিও। সেইসময় গয়না না পেয়ে অশোক করকে ডাকেন বিডিও। অশোক কর তখন স্বীকার করে নেন যে গয়না তিনি-ই নিয়েছেন।
অভিযোগ, এরপরই অশোক করকে মারধর করা হয়। তখন অশোক কর গয়না কোথায় কাকে দিয়েছে তা বলে দেন বিডিওকে। তারপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন এই অশোক করের সঙ্গে নিহত স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যার কীভাবে পরিচয়? অশোক করের দাবি, আগে তিনি সল্টলেকে দত্তাবাদে ভাড়া থাকতো। সেই সূত্রেই স্বন কামিল্যার সঙ্গে তাঁর পরিচয়।
এখন এই অশোক কর তাঁর চঞ্চল্যকর বয়ানে জানিয়েছেন, ২৮ তারিখ সাড়ে বারোটা নাগাদ 'স্যার' ডেকে পাঠান। যাওয়ার পর তাঁকে মারধর করা হয়। তারপর সন্ধ্যা ৬টার সময় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অশোক কর বলেন, "বাড়ি চলে আসি, তারপর কী হয়, জানি না। আমি যাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর স্বপনকে নিয়ে আসে। তারপর ঘরের মধ্যেই দুজনকে মারধর করে। আমি স্বপনকে বললাম, দাদা তুই সোনাটা দিয়ে দে, স্বীকার করে নে। তখন স্বীকার করেনি, সাড়ে তিনটের পর স্বীকার করে। বলে সোনাটা দিয়ে দেবে। তারপর কে মেরেছে, আমি বলতে পারছি না। আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, আমি চলে এসেছি। তারপর কী হয়েছে আমি জানি না। যে মেরেছে তাঁর শাস্তি হোক। যদি প্রশান্ত বর্মন মেরে থাকে, তবে তাঁর শাস্তি হোক। আমাদের থানার হাতে তুলে দেয়নি। উলটে প্রচুর মারে। সেই থেকে বিছানায়, ডাক্তার দেখাতেও পারিনি।"
ওদিকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যা খুনের তদন্তে পুলিসের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সিসিটিভি ফুটেজও মিলেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্যবসায়ীকে গত মঙ্গলবার সল্টলেকের দত্তাবাদ সোনার দোকান থেকে দুটি গাড়িতে করে তোলা হয়েছিল ১২টা ৫২ নাগাদ। দুপুর ১টা ২০ নাগাদ তাঁকে নিউটাউনের এবি ব্লকের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসা হয়। ২৮ মিনিটের ব্যবধানে সল্টলেক দত্তাবাদ থেকে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে আনা হয়েছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তা একেবারে স্পষ্ট।
অভিযোগ, বিডিও-র নীল বাতির গাড়ি সঙ্গে আরও একটা ফরচুনার গাড়ি ছিল। নিউটাউনে বাড়ির গেটের সামনের ফুটেজে মিলেছে আরও চঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায়, যখন গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে, ব্যবসায়ীর ঘাড়ের পিছনে কলার ধরে টেনে ফ্ল্যাটে ঢোকানো হচ্ছে। শুধু দুটো গাড়ি নয়, আরও চারটে বাইক আসে। তাঁরা কেউ নিউটাউন সংলগ্ন এলাকার নয়, সমস্ত বাইরের নাম্বার প্লেট। এরপর রাত ৯টা ১৫ নাগাদ রীতিমতো টেনে হিঁচড়ে চ্যাংদোলা করে ফের ফরচুনার গাড়িতে তোলা হয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে। গেটের মুখে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সেটাও স্পষ্ট।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৭ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ফ্ল্যাটের মধ্যে কী ঘটনা ঘটেছিল? প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে,প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচি হয়। মারধর হয়। যখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তখনই বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রাগাছি খালপাড়ে মেলে স্বপন কামিল্যার দেহ। এখন পুলিস আরও কিছু ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। যে রাস্তা দিয়ে যাত্রাগাছি খালপাড়ে গিয়েছিল, সেই ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টায় পুলিস।