• ক্যামেরার ট্র্যাপে শ্লথ ভাল্লুকের ভিডিও! চার বছর পরে দেখা মিলল ডেরার
    প্রতিদিন | ০৬ নভেম্বর ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মুখোমুখি হওয়ায় বেঁধেছিল সংঘাত। জখমের সংখ্যাও একাধিক। কিন্তু সরকারি তথ্য-প্রমাণ? বছর সাড়ে চার আগে বিষ্ঠা থেকে প্রমাণ মিলেছিল ‘ডেরা’-র। বছর তিন আগে একঝলক ধরা দিয়েছিল ক্যামেরায়। আর এবার একেবারে কালো কুচকুচে লোমশ চেহারায় হেলেদুলে চলাফেরার ভিডিও মিলল।

    পুরুলিয়া বনবিভাগের সঙ্গে ‘হিল’-র যৌথ প্রকল্পে বন্যপ্রাণ উপস্থিতি নিয়ে যে কাজ চলছে তার ক্যামেরা ট্র্যাপেই পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটে শ্লথ ভাল্লুকের ভিডিও বনদপ্তরের হাতে এসেছে। যা একেবারে প্রথম। আর এই ভিডিও প্রমাণ করে দিল বাংলা-ঝাড়খণ্ডে আসা যাওয়া করে অস্থায়ী ‘ডেরা’ নয়। একেবারে রেসিডেন্ট’ হয়ে পুরুলিয়ায় থাকা। তাই উল্লসিত পুরুলিয়া বনবিভাগ চলতি শীতেই এই ভাল্লুকের গণনা করবে। যা পশ্চিমাঞ্চল-সহ দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম। সেইসঙ্গে সমগ্র পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম পুরুলিয়ায় শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রোজেক্টের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

    এই সামগ্রিক বিষয়টি দেখতে খুব শীঘ্রই পুরুলিয়া আসছেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) সন্দীপ সুন্দ্রিয়াল। কিন্তু পুরুলিয়ার জঙ্গলে ভাল্লুকের সংখ্যা ঠিক কটা? পুরুলিয়া বনবিভাগ বলছে,
    পূর্ণবয়স্ক পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে কম করে ১০-১১টি। তার মধ্যে পুরুষ ৩-৪ টি। মহিলা ৬-৭টি। সঙ্গে থাকতে পারে শাবকও। কারণ পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের হরতান গ্রামের জঙ্গলে শাবক-সহ মা ভাল্লুকের মুখোমুখি হয়েছেন ওই পাহাড়তলির মানুষ। ফলে চলতি শীত বা পর্যটনের মরশুমে পর্যটকদের কাছে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে নিঃসন্দেহে একটা বড় খবর।

    রাজ্যে উত্তরবঙ্গ ও পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া ছাড়া স্থায়ীভাবে জঙ্গলে বসবাস করা ভাল্লুকের বিচরণ আর কোথাও নেই। শ্লথ বিয়ার শুধু পুরুলিয়াতেই রয়েছে। তাছাড়া ভাল্লুক উদ্ধার বা পুনর্বাসন কেন্দ্র বাংলার মধ্যে পুরুলিয়াতেই আছে। তাই শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রোজেক্ট পুরুলিয়ায় গড়ার প্রস্তাব রয়েছে। যা ওই ভাল্লুক পুনর্বাসন কেন্দ্রের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হবে।

    ইতিমধ্যেই সেন্ট্রাল জু অথরিটির একটি টিম পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়া মিনি জু ও ওই ভাল্লুক পুনর্বাসন কেন্দ্র ঘুরে গিয়েছে। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “শুধু ট্র্যাপ ক্যামেরাতে ভিডিও ধরা পড়া নয়। ভাল্লুকের সংখ্যা পুরুলিয়ায় ক্রমশ বাড়ছে। তাই চলতি শীতের মরশুমেই আমরা ভাল্লুক গণনার কাজ শুরু করছি। সেই সঙ্গে শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রোজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে যা পূর্ব ভারতের মধ্যে প্রথম।” হিলের সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরুলিয়ার অন্য বনাঞ্চলের থেকে কোটশিলা জীব বৈচিত্র্যে অনেকটাই এগিয়ে আছে। বনদপ্তরের সচেতনতায় ওই বনাঞ্চলে মানুষের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত। যার ফলস্বরূপ একের পর এক বন্যপ্রাণ উপস্থিতির প্রমাণ মিলছে।”

    পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে খবর, শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রোজেক্টের পরিকল্পনাতেই রয়েছে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে থাকা সুরুলিয়া মিনি জু’কে ঘিরে একটি স্যাটেলাইট জু গড়ার। যা সুরুলিয়ার চিড়িয়াখানা বা প্রস্তাবিত শ্লথ বিয়ার কনজারভেশন প্রোজেক্টের সহায়ক হবে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে ব্রিডিংয়ের মতো কাজে বা ভাল্লুক উদ্ধারে দু’টি পরিকাঠামো রেখে এগোনো যায়। সেই স্যাটেলাইট মিনি জু গড়ার তালিকায় পুরুলিয়া বনবিভাগের প্রথম পছন্দ মাঠা। তবে তালিকায় রয়েছে ঝালদা, কোটশিলা বনাঞ্চলের নামও।

    হরতান গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় মন্ডল, ভরত মাহাতো বলেন, “সন্ধ্যার পর থেকে একেবারে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসে ভাল্লুক। উইপোকা, পিঁপড়ে, ফল, ফুল খেতে জঙ্গল থেকে নেমে আসে। ছোট ছোট পাহাড়ি ঝোরাতে জল খেতেও নামে। সিমনি বিটের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজনদের সঙ্গে কতবার যে মুখোমুখি হয়েছে তার হিসাব নেই। সংঘাতও হয়েছে। তবে আমরা জঙ্গলে খুব সাবধানে যাই। একেবারে দলবেঁধে। ইদানিং ভাল্লুকের সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে।”

    বনবিভাগ বলছে, কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি থেকে ঝালদা রেঞ্জ-র কলমার দিকেও এই বন্যপ্রাণ রয়েছে। রয়েছে বাঘমুন্ডির কালিমাটি, অযোধ্যা পাহাড় এলাকাতেও। ২০২১ সালে বলরামপুর বনাঞ্চলের ঘাটবেড়া বিটের গজাবুরু পাহাড়-র এক অংশে ডুমুরবেড়াতেও এই বন্যপ্রাণ-র বিষ্ঠা মিলেছিল।
  • Link to this news (প্রতিদিন)