টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ প্রক্রিয়া শুরু হতেই নিরপেক্ষতা নিয়ে শোরগোল ছড়িয়েছে ছাতনায়। অভিযোগ, শাসক দলের প্রাক্তন প্রার্থীকে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপরেই, এসআইআর প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।
অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন সজল মুখোপাধ্যায়। ছাতনা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণকুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক তিনি। এই বিদ্যালয় রয়েছে ব্রাহ্মণকুলি গ্রামের ৭২ নম্বর বুথ এলাকায়। সেখানেই ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সজল মুখোপাধ্যায়। ওই নির্বাচনে তিনি ৭৫ ভোটে পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থী অশোক বিদের কাছে।
বিজেপির অভিযোগ, সেই প্রার্থীকেই এবার ভোটার তালিকার সংশোধন প্রক্রিয়ায় ৭১ নম্বর বুথে বিএলও হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আরও অভিযোগ, সজলবাবু এখনও ওই এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সভাপতি পদে রয়েছেন। বিজেপির দাবি, এটি প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত। বিজেপি নেতা সব্যসাচী রায় কটাক্ষ করে বলেন, “যিনি একসময় তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়েছেন, তিনিই এখন ভোটার তালিকার নিরপেক্ষ কর্মকর্তা! এটা ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ নয়। প্রশাসন নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে শাসক দলের খেলায় নামছে।” অন্যদিকে, বিজেপি নেতা অশোক বিদ বলেন, “একজন প্রাক্তন তৃণমূল প্রার্থীকে বিএলও করা মানে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। আমরা ইতিমধ্যেই ছাতনার বিডিও সৌরভ ধল্লকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। এরপরেও তিনি এখনও দায়িত্বে রয়েছেন। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।”
সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সজল মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি এখন কোনও রাজনৈতিক দলে নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরাজয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। বর্তমানে শুধুমাত্র শিক্ষক হিসেবেই কাজ করছি। বিএলও হিসেবে দায়িত্বও সেই যোগ্যতাতেই পেয়েছি।” ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন মণ্ডল বলেন, “এই অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন। সজলবাবু এখন কোনও দলীয় পদে নেই। বিজেপি হেরে গিয়ে এখন প্রশাসনকেও দোষারোপ করছে।”
তবে প্রশাসনের এই ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় মানুষ বলছেন, “যেখানে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নিরপেক্ষ হওয়ার কথা, সেখানে প্রাক্তন তৃণমূল প্রার্থীকে দায়িত্ব দেওয়া মানে ভোটার তালিকা নয়, ভোটের মাঠ তৈরি করা।” এবিষয়ে ছাতনার বিডিও সৌরভ ধল্ল বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি কোনও অসঙ্গতি থাকে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”