বন্ধ কেন কমিশনের নকল রোধী সফটওয়্যার ব্যবহার, উঠছে প্রশ্ন, রাহুলের ‘ভোটচুরি’ বোমার পর আসছে অসংখ্য অভিযোগ
বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: শ্বেতা, সুইটি, সরস্বতী... একই ছবি দিয়ে অসংখ্য নাম। ভুয়ো ভোটার নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে ‘বোমা ফাটিয়েছেন’ রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিযোগ, হরিয়ানায় গণহারে ‘ভোটচুরি’ হয়েছে। ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা ২৫ লক্ষ। বিজেপির স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে কমিশন। ব্রাজিলীয় এক তরুণীর ছবি ব্যবহারে করে যেসব ভুয়ো কার্ড তৈরি হয়েছিল বলে রাহুলের দাবি, তেমনই একাধিক মহিলা ও তাঁদের পরিবারের বয়ান সামনে এসেছে বৃহস্পতিবার। প্রশ্ন হল, কীভাবে ব্রাজিলীয় তরুণীর ছবি ব্যবহার করে ভুয়ো কার্ড তৈরি হল? লোকসভার বিরোধী দলনেতার তোলা অভিযোগের মধ্যেই কমিশনের একটি বিশেষ সফ্টওয়্যার চর্চায় চলে এসেছে। একই ছবি একাধিকবার ব্যবহার সহ বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি রোখার কাজে এটি খুবই কার্যকর। তবে কমিশন সূত্রে খবর, নকল রোধী এই বিশেষ সফ্টওয়্যারটি গত দু’বছর ধরে ব্যবহারই করা হয়নি।
মুনেশ নামে এক মহিলার বক্তব্য, কীভাবে তাঁর নাম ও ঠিকানা সহ অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে ওই ভুয়ো কার্ড তৈরি হল তা তাঁর জানা নেই। তাঁর কাছে যে ভোটার কার্ডটি রয়েছে সেখানে তাঁর নিজের ছবিই আছে। একইভাবে সেই বিদেশিনীর ছবি দিয়ে তৈরি হয়েছে গুনিয়া নামে আরও এক মহিলার কার্ড। ঘটনাচক্রে বিনোদ নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী গুনিয়া ২০২২ সালের মার্চে মারা গিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ব্রাজিলীয় তরুণীর ছবি দিয়ে তাঁর নাম কীভাবে ভোটার তালিকায় জায়গা পেল, সেই প্রশ্ন তুলছে পরিবার। হরিয়ানার সোনিপথ জেলার রাই বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মালিকপুর গ্রাম থেকে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। একটি পরিবারের দাবি, তাদের বাড়ির চার সদস্যর নাম একসঙ্গে ভোটার তালিকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। অজয় নামে একজনের দাবি, ভোটের দিন বুথে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর নাম বাদ পড়েছে। আবার অঞ্জলি নামে এক মহিলার অভিযোগ, তিনি লোকসভা নির্বাচনের সময় ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে ভোটার তালিকায় নাম বাদ যায়।
মাচরোলি এলাকায় পিংকি নামে একজনের দাবি, ভোটার কার্ড হাতে পাওয়ার পর দেখেন সেখানে গ্রামেরই অন্য এক মহিলার ছবি রয়েছে। সেই কার্ড সংশোধনের জন্য ফিরিয়ে দেন। নতুন কার্ড আজ পর্যন্ত পাননি। জোড়া ভোটার কার্ডের হদিশ মিলেছে বিমলা নামে এক মহিলার। তাঁর ছেলে প্রদীপ বলেন, মা ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নাম ও ছবি ব্যবহার করে তৈরি অন্য কার্ডটি ভুয়ো। যারা এই কাজ করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। সামগ্রিকভাবে এইসব অনিয়মের শিকার হওয়া ভোটাররা কেউ বলছেন, কমিশনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী। আবার কারও বক্তব্য, ছবিতে গরমিল হয়েছে মাত্র। গণহারে ভোটচুরির অভিযোগ তাঁরা মানতে রাজি নন।
এরই মধ্যে নকল রোধী বিশেষ সফ্টওয়্যারের ব্যবহার কমিশন কেন বন্ধ করে রেখেছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সফ্টওয়্যারটি তৈরি করেছিল সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং (সিডিএসি)। শেষবার সেটির ব্যবহার হয়েছিল ২০২২ সালে বার্ষিক স্পেশ্যাল সামারি রিভিশন (এসএসআর) চলার সময়। এর মাধ্যমে গোটা দেশের প্রায় তিন কোটি ‘ডুপ্লিকেট’ বা ‘ইনভ্যালিড’ নাম বাদ পড়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে এই বিশেষ সফ্টওয়্যার আর ব্যবহার হয়নি। গত ২৭ অক্টোবর সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বক্তব্য ছিল, এসআইআর চলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই কারণে নকল ও ভুয়ো রোধী ‘টেকনিক্যাল’ প্রত্রিয়া স্থগিত আছে।