• দু’মুখো বিজেপি, জন গণ মন অসম্মানের ‘ভিতে’ বন্দেমাতরমের ১৫০ বছর পালন
    বর্তমান | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ১৮৭৫ সালে হুগলির চুঁচুড়ায় গঙ্গার ধারে একটি বাড়িতে বসে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে ‘বন্দেমাতরম’ লিখেছিলেন, তার আজ সার্ধশতবর্ষ। স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐতিহাসিক ভূমিকা নেওয়া ‘বন্দেমাতরম‌’কে ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধান সভায় ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’র সমমর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। বন্দেমাতরম হয়েছিল ‘জাতীয় গীত’। তাই সংস্কৃতি মন্ত্রকের আয়োজনে বন্দেমারতরম গানের সার্ধশতবর্ষ পালন হবে ঘটা করে। আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা ভোট। ঠিক তার আগে। সে কি বাঙালি আবেগ উসকে দিতে? কিন্তু আর এক বাঙালি এবং আক্ষরিক অর্থে যিনি বিশ্বজনীন, সেই রবি ঠাকুরের ‘জন গণ মন’র অবমাননা দাগ গায়ে লাগলে ভাবাবেগের রাজনীতি ধারালো হবে তো? এই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, একদিকে শুক্রবার দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষব্যাপী বন্দেমাতরম গানের সার্ধশতবর্ষ পালনের সূচনা করবেন। অন্যদিকে, কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদ বিশ্বেশ্বর হেগড়ে কাগেরি সরাসরি অবমাননা করলেন জাতীয় সংগীতের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। দাবি করে বসলেন, রবি ঠাকুর নাকি ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জকে তুষ্ট করার জন্য ওই গান লিখেছিলেন! ‘জন গণ মন’ অবমাননার ভিতের উপর দাঁড়িয়ে বন্দেমাতরম নিয়ে বিজেপির প্রচার রাজনীতিতে জ্বলে উঠেছে কংগ্রেস, তৃণমূল।

    বন্দেমাতরম নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রচারপর্ব শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্র। আজ, শুক্রবার প্রকাশ হবে বিশেষ ডাক টিকিট, মুদ্রা। সকাল ১০টায় প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে সমবেতভাবে গাওয়া হবে ‘বন্দেমাতরম।’ তার মধ্যেই বিজেপি এমপির বেফাঁস মন্তব্য। প্রতিবাদে তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষের তোপ, ‘বিজেপি যে বাংলা বিরোধী, ভারত বিরোধী হোয়াটসঅ্যাপ ইউনির্ভার্সিটি মানসিকতার জুমলা পার্টি, তা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে।’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের পুত্র তথা কর্ণাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্কও বিশ্বেশ্বর হেগড়েকে এক হাত নিয়েছেন। বলেছেন, ‘ননসেন্স। সংঘের হোয়াটসঅ্যাপ ইতিহাস পড়েই এইসব জেনেছেন হেগড়ে।’ প্রিয়াঙ্ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘জন গণ মন প্রথম গাওয়া হয়েছিল ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায়, জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে।’ সবচেয়ে বড় কথা, রবি ঠাকুর নিজেই পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পুলীনবিহারী সেনকে চিঠিতে স্পষ্ট করেছিলেন, এর উদ্দেশ্য কোনও জর্জের তোষণ নয়। লিখেছিলেন, ‘...সে বৎসর ভারত সম্রাটের আগমনের আয়োজন চলছিল। রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান আমার কোনো বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্য আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল। তারই প্রবল প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায় আমি জনগণমন অধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেছি, পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থায় যুগ যুগ ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথি, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক, সেই যুগ যুগান্তরের মানবভাগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ কোনো জর্জই হতে পারেন না, সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)