• এসআইআরের কারণে কলকাতা পুরসভার জন্ম-শংসাপত্র বিতরণে কারচুপি! অভিযোগ জানিয়ে কমিশনারকে চিঠি শুভেন্দুর
    আনন্দবাজার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
  • বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া শুরু হতেই কলকাতা পুরসভায় হঠাৎ করে জন্ম-শংসাপত্র নেওয়ার হিড়িক পড় গিয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রে তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভা। জন্ম-শংসাপত্র ইস্যু নিয়ে এ বার বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার কমিশনার সুমিত গুপ্তকে চিঠি দিয়ে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, পুরসভা বেআইনি, অনৈতিক ও অসাধু উপায়ে গণহারে জন্ম- শংসাপত্র বিলি করছে — যা প্রকৃত নাগরিকদের জন্য নয়, বরং সন্দেহভাজন সেই সমস্ত ব্যক্তির জন্য, যাঁরা এসআইআর প্রক্রিয়ার সময় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। যদিও তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভার তরফে বিরোধী দলনেতার এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

    চিঠিতে শুভেন্দুর দাবি, “এটি আসলে ভোটার তালিকা প্রভাবিত করার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার এক নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। জন্ম-শংসাপত্র একটি আইনগত নথি, যা সাধারণত নবজাতকদের জন্য বা খুব বিরল ক্ষেত্রে প্রকৃত বিলম্বিত নিবন্ধনের জন্য দেওয়া হয়। অথচ এখন তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, জনসংখ্যার গঠন পাল্টে দেওয়ার স্বার্থে।” তিনি আরও দাবি করেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে গত ৩০ দিনে ইস্যু হওয়া জন্ম-শংসাপত্রের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইন (আরটিআই) অনুযায়ী আবেদন করেছেন। পাশাপাশি পুরসভার মুখ্য আধিকারিককে লিখিত ভাবে অনুরোধ করেছেন, যাতে ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্ম-শংসাপত্র ইস্যুর তথ্য এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়।

    জবাবে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, “কলকাতা পুরসভা থেকে জন্ম-শংসাপত্র পাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে আবেদন করলে, তবেই জন্মের শংসাপত্র পাওয়া যায়। বৈধ নথিপত্র জমা দেওয়ার পরেই, কোনও ব্যক্তির আবেদন কলকাতা পুরসভা গ্রহণ করে। তাই বিরোধী দলনেতার অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তিনি আরও বলেন, “আসলে বিরোধী দলনেতা নিজে যেমন, সকলকে তেমনই মনে করেন। কারও প্রতি ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেখাতে জানেন না। আসলে তাঁর এমন অভিযোগের জবাব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।”

    পুর কমিশনারের কাছে শুভেন্দু যে চারটি তথ্য চেয়েছেন সেগুলি হল, ২০২৫ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত মোট কতগুলি জন্ম শংসাপত্র ইস্যু হয়েছে। পুরসভা এলাকার বাইরে বসবাসকারীদের দেওয়া শংসাপত্রের সংখ্যা। বিলম্বিত নিবন্ধনের সংখ্যা (বিশেষত ২০০৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে) এবং সাম্প্রতিক নবজাতকদের শংসাপত্রের সংখ্যা। বিরোধী দলনেতা কড়া ভাষায় সতর্ক করে বলেছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ১৯৬৯-এর নিয়ম লঙ্ঘনের কোনও চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। শুভেন্দুর আরও হুঁশিয়ারি, “নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এই বেআইনি অনিয়মের তদন্ত শুরু করুক, যাতে কোনও অনুপ্রবেশকারী বেআইনি ভাবে সুবিধা না পায়।”

    এই বিষয়ে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্টও করেছেন বিরোধী দলনেতা। সেই পোস্টটিতে তিনি নির্বাচন কমিশন, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেকে যুক্ত করেছেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)