• বাড়িতে তালা দেখে ‘বাংলাদেশি’ বলে প্রচার, বাড়ছে ক্ষোভ
    আনন্দবাজার | ০৭ নভেম্বর ২০২৫
  • ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) জন্য ফর্ম বিলির কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে রাজারহাট, নিউ টাউন এবং সল্টলেকে খবর রটেছে যে, অনেকেই নাকি বাড়ি তালাবন্ধ করে চলে যাচ্ছেন। এলাকায় গুঞ্জন, যাঁদের বাড়ি তালাবন্ধ দেখা যাচ্ছে, তাঁরা নাকি বাংলাদেশের বাসিন্দা। এসআইআর-পর্বে তাঁরা বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন। যদিও বাস্তবে এমন ঘটেছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়। এই সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণও সামনে আসেনি। তবে, এই ধরনের প্রচার ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে কোথাও কোথাও।

    যেমন, নিউ টাউনের ঘুনি এলাকায় এ নিয়ে বৃহস্পতিবার উত্তেজনা তৈরি হয়। বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ, সব রকম নথি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ক্ষুব্ধ লোকজন এ দিন সেখানে দুই সংবাদকর্মীকে আটকে রেখেছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে এসে সেখানে বস্তিতে বসবাস করছেন। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে আবর্জনা, প্লাস্টিক সংগ্রহ এবং বিক্রি করেই তাঁরা সংসার চালান বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। তাঁদের দাবি, অন্য জেলার ভোটার হলেও তাঁরা এ দেশের নাগরিক। নাগরিকত্ব প্রমাণ করার নথিও তাঁদের কাছে রয়েছে। অনেকে ইতিমধ্যেই সেই সব নথি আনতে গ্রামে চলে গিয়েছেন। কিন্তু রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, ‘বাংলাদেশি’ বলেই তাঁরা এলাকা ছেড়েছেন, এমনই অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।

    একই রকম খবর ছড়িয়েছে নিউ টাউন লাগোয়া বিধাননগর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আটঘড়ায়। সেখানকার পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মিনতি দাস, সোরিফা বিবি, রোজিনা বিবিদের অভিযোগ, এসআইআর শুরু হতেই তাঁদের ঘর দেখিয়ে ‘বাংলাদেশিদের ঘর’ বলে প্রচার চলছে। এমনকি, সমাজমাধ্যমে তাঁদের ঘরের ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে। যার জেরে তাঁরা পুলিশি হয়রানির সম্মুখীন হতে পারেন বলেই আশঙ্কা ওই মহিলাদের। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি আজিজুল হোসেন মণ্ডলের দাবি, ‘‘গত এক দশকে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গরিব মানুষেরা এখানকার কয়েকটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন জমিতে বসতি গড়েছেন। বিহার থেকেও অনেকে এসেছেন। তাঁরা এখানকার ভোটার নন। বাংলাদেশ থেকে কেউ এসে বসবাস করলে সেটা প্রশাসন দেখবে।’’

    সল্টলেকের ডিডি ব্লকে কয়েক ঘর পরিবার বসবাস করে। ওই বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। বহু বছর আগে কাজের খোঁজে এখানে এসে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পরে প্রশাসন তাঁদের ডিডি ব্লকে রাখার ব্যবস্থা করে। তাঁদের দাবি, তাঁরা বিধাননগর পুর এলাকায় নানা ধরনের কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু এসআইআর চালু হতেই তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিধাননগর পুর এলাকা লাগোয়া মধ্যমগ্রামের রোহন্ডা পঞ্চায়েতের চণ্ডীবেড়িয়া এলাকাতেও দুই বাসিন্দার বন্ধ বাড়ি ঘিরে চলছে ‘বাংলাদেশি’ গুঞ্জন।

    উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য মহম্মদ আফতাবউদ্দিন জানাচ্ছেন, নিউ টাউনের আশপাশে যাত্রাগাছি, আর আর সাইট, জগৎপুরের মতো জায়গায় বাংলাদেশ থেকে ছিন্নমূল হয়ে আসা মানুষের কলোনি রয়েছে। সেখানে সব সম্প্রদায়ের লোকজনই বসবাস করেন। তাঁরা এ দেশের নাগরিক। আফতাবের কথায়, ‘‘ঘুনি এলাকায় যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগই আয়লার পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে এসেছিলেন। কিছু বাড়ি বন্ধ রয়েছে। হতে পারে, তাঁরা কাগজ আনতে গিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন বলে রটানো হচ্ছে।’’

    যদিও নিউ টাউনের বাসিন্দা বিজেপি নেতা অনুপম ঘোষের পাল্টা দাবি, ‘‘ভোট-ব্যাঙ্ক বাড়াতে দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিয়ে গত ১৪ বছরে সল্টলেক, নিউ টাউন, রাজারহাট এলাকায় তৃণমূল বাংলাদেশ ও মায়ানমারের নাগরিকদের পাকাপাকি বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। যত খবর আসছে, তা ওই সব এলাকা থেকেই। কিছু কিছু পরিবারের বসবাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সকলের নয়।নিউ টাউনের অনেক জায়গায়, বিশেষত রাস্তায় যাঁরা আনাজ বিক্রি করেন, দোকান চালান, তাঁদের কথার টান শুনলেই বুঝতে পারবেন, তাঁরা কোন বঙ্গের।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)